Saturday, March 28, 2020

স্প্যানিস ফ্লুতে হোমিও

থেরাপিউটিকস - ৩
---------------------
ভয়াবহ স্প্যানিস ফ্লু [1918 flu pandemic, deadly influenza pandemic.] এবং সফল হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা: ২য় পর্ব
---------------------
Dr. Earnest F. Sappington একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেন। Homoeopathic Medical Society of Columbia,এর ১৫ জন চিকিৎসক ১৫০০ রোগী দেখেন, তার মধ্যে মারা যায় মাত্র ১৫ জন।
তাদের কঠিন কষ্টসাধ্য পরিস্থিতির মধ্যেও মৃত্যুহার ছিল ১% (তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলছিল)। এ রিপোর্টটি ডা: পিয়ার্সন প্রকাশিত গড় হিসেবের সাথে মিলে যায়। ওয়াশিংটন হোমিওপ্যাথিক হাসপাতালে আরোগ্যের হার ছিল ১০০%। কলম্বিয়ায় তখন বিশ্বযুদ্ধের কারনে কঠিন সময় যাচ্ছিল। একজন চিকিৎসক দেখেন ১৩ জন যুদ্ধকর্মি একটি চিলে কোঠার মধ্যে ঘুমান। তাদের মধ্যে ৭ জন মহিলা ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত ছিলেন। তাদের জন্য নার্স পাওয়া অসম্ভব ছিল। সুস্থ ৬ জন তাদের জন্য স্বেচ্ছায় নার্সিং করছিল। আমি সেই অবস্থায় কাঠিয়ে উঠতে পেরেছিলাম, এবং কেউ মারা যায় নি। এ রকম অভিজ্ঞতার হিসেব কলম্বিয়া জেলায় বহুগুনে বৃদ্ধি করা যেতে পারে। [১১]
আরেকটি সমীক্ষা প্রকাশ করেন ডার্বির Dr. Herbert Roberts। কানিকটিকাটের ৩০ জন্য চিকিৎসক ৬৬০২ জন রোগীর চিকিৎসা দেন, তাদের মাঝে মারা যায় ৫৫ জন। মৃত্যুহার ছিল ০.৮৩ %। তিনি বলেন, “তাদের মাঝে ইনফ্লুয়েঞ্জাজনিত মেনিন্জাইটিস এবং ৪৯৬ জনের নিউমোনিয়া দেখা দিয়েছিল।” [১২]
নিউইয়র্ক মেডিকেল কলেজের Profdessor Guy Beckley Stearns একটি প্রতিবেদন পর্যালোচনা করেন। International Hahnemannian Association (IHA) সদস্যদের দ্বারা ১৬, ৯১৩ রোগী চিকিৎসিত হয়। সেখানে ৬৭ জন মৃত্যুবরণ করেন, মৃত্যুহার ছিল মাত্র ০.৪%। এই শেষ সংখ্যাগুলি অবশ্যই জেনুইন হোমিওপ্যাথদের দ্বারা প্রাপ্ত ফলাফলের নিখুঁত প্রতিনিধিত্ব করে। কারণ এই সমীক্ষায় ১৩০ জন সক্রিয় আমেরিকার হোমিওপ্যাথের মধ্যে ৭৯ জন অংশগ্রহন করেছিলেন। যারা অংশ নেন নি তাদের সাথে পরবর্তীতে
Dr. Stearns কথা বলে জেনেছেন যে তাদের চিকিৎসিত রোগীর মৃত্যুহার একই রকমের ছিল।” [১৩]
মিচিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের Professor Willis A. Dewey একটি সমীক্ষা প্রকাশ করেন। ৩০ জন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক ৯,২৫০ জন রোগী চিকিৎসা করেন, তাদের মাঝে মৃত্যু হয় ১৭ জনের। মৃত্যুহার ছিল ০.১৮ % [১৪]
Dr. L. A. Royal সেন্ট্রাল আইওয়া হোমিওপ্যাথিক এসোসিয়েশনের ১৮ জন চিকিৎসকের থেকে প্রাপ্ত সমীক্ষা প্রকাশ করেন। তারা ৫,০৩২ জন রোগী চিকিৎসা করেন। তাদের মাঝে চিকিৎসাকালে ১৩৭ জনের নিউমোনিয়া দেখা দেয়। যখানে এলোপ্যাথিক চিকিৎসাকালীন সময়ে নিউমোনিয়া আক্রান্ত হওয়ার হার ৩০% সেখানে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাকালীন সময়ে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হার ২.৭% যা নি:সন্দেহে হোমিওপ্যাথদের গর্বের বিষয়।
বেশিরভাগ ৫/৬ দিন ভোগার পর হোমিওপ্যাথদের নিকট আসে। সেসময় ইনফ্লুয়েঞ্জা সাধারণ তিন দিনে কমে যেত, কিন্তু যাদেরটা ভাল না হতো তারা ৫ম বা ৬ষ্ঠ দিনে নিউমোনিয়িায় আক্রান্ত হতো। ৫০৩২জন রোগীর মাঝে মাত্র ১৮ জন রোগী মারা যায়। মৃত্যুহার ০.৩৬ % মাত্র। আমি অন্য যেকোন চিকিৎসা পদ্ধতির চিকিৎসকদের চ্যালেঞ্জ জানাই যে তারা দেখাক যে এত বেশি সংখ্যক রোগীর মাঝে এত ভাল ফলাফল তারা দেখাতে পারে কি না। [১৫]
------------
তথ্যসূত্র:


[১১] Ernest F. Sappington. Discussion: Influenza: a favortable mortality and publicity. Journal of the American Institute of Homeopathy 1919-20; 12: 588.
[১২] H. A. Roberts. Discussion: Influenza: a favoable mortality and publicity. Journal of the American Institute of Homeopathy 1919-1920; 12: 591.
[১৩] Donald Macfarlan. Materia medica meeting. Homoeopathic Recorder 1920; 35; 262-265.
[১৪] W. A. Dewey. Homeopathy in influenza—A chorus of fity in harmony. Journal of the American Institute of Homeopathy 1920-21; 13: 1038-1043.
[১৫] L. A. Royal. Influenza and its results under homeopathic care in Central Iowa. Iowa Homeopathic Journal 1919-1920; 13: 194-198.

করোনায় হোমিও-৩

সংগৃহীত: Mohammad Mohshinuzzaman BHMS

Coronavirus disease 2019 (COVID-19)
-------------------
আজ আমরা আলোচনা করবো Covid-19 এর হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা বিষয়ে। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা কোন রোগের নাম ধরে হয় না। রোগীর মাঝে প্রকাশিত লক্ষণাবলী ও ব্যক্তিস্বাতন্ত্রিকরণ (individualization) করে চিকিৎসা করা হয়।
#Covid-19 রোগের লক্ষণগুলো হল -
প্রধান লক্ষণ: জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট।
অন্যান্য লক্ষণ: দুর্বলতা, শরীর ব্যথা (continuous dull pain), নাক থেকে সর্দিস্রাব, গলাব্যথা।
উপরের লক্ষণগুলো কারো মাঝে হালকাভাবে দেখা দেয় কারো মাঝে মধ্যম ভাবে দেখা দেয়, কারো ক্ষেত্রে মারত্মকভাবে দেখা দিতে পারে। কিছু মানুষের আবার কোন লক্ষনই প্রকাশ পায় না। যাহোক বৃদ্ধলোক এবং যাদের ক্রনিক মেডিকেল কন্ডিশন যেমন- হৃদরোগ বা ফুসফুসের রোগ (emphysema, COPD), উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার ইত্যাদি রোগ আছে তাদের ক্ষেত্রে অবস্থা ক্রিটিক্যাল হতে পারে।
এ রোগটি সাধারণ ঠাণ্ডাকাশির মতো করেই শুরু হয় যেমনটা আমরা ইনফ্লুয়েঞ্জার রোগীতে দেখতে পাই। রোগটি যদি শুরুতে থামানো না যায় তাহলে জটিল অবস্থা ধারণ করে। সেক্ষেত্রে নিউমোনিয়া দেখা দেয় (উভয় ফুসফুস আক্রান্ত হয়), শরীরের অন্যান্য অঙ্গের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে রোগী মারা যেতে পারে।
সুতরাং করোনার রোগী চিকিৎসা করতে গেলে আমাদের যেসব ওষুধ কাশি, জ্বর, ইনফ্লুয়েঞ্জা ইত্যাদি রোগের ক্ষেত্রে বেশি ব্যবহৃত হয় সেগুলো সম্পর্কে ভাল ধারণা রাখতে হবে। সেই সাথে শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়ায় ব্যবহৃত ওষুধগুলো সম্পর্কেও ভাল জ্ঞান রাখতে হবে যাতে ক্রিটিক্যাল অবস্থায় সঠিক ওষুধ নির্বাচন করতে পারি।
প্রতিটি ওষুধেরই আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্যপূর্ণ লক্ষণ রয়েছে সেগুলো প্রতিটি রোগীর ব্যক্তিস্বাতন্ত্রিকরণের সাথে মিল করে ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে।
#শক্তি ও মাত্রাঃ
এক্ষেত্রে ওষুধ অবশ্যই শক্তি পরিবর্তন রীতিতে প্রয়োগ করতে হবে। ৫০ সহস্রতমিক ওষুধ ০/১ বা ০/২ থেকে রোগীর অবস্থা অনুযায়ী প্রয়োগ করতে হবে। সাধারণভাবে ৪ ঘন্টা পরপর দেয়া যেতে পারে। প্রয়োজনে খুব ঘনঘন বা দেরিতে প্রয়োগ করতে হবে। যারা শততমিক ওষুধ ব্যবহার করেন, তারা ওষুধের ৬, ৩০, ২০০, ১০০০ শক্তি রোগীর অবস্থা অনুযায়ী ব্যবহার করবেন।
পরবর্তীতে আমরা সাধারণ ঠাণ্ডাকাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জা ও নিউমোনিয়াতে বেশি নির্দেশিত ওষুধগুলো সম্পর্কে আলোচনা করবো ইন শা আল্লাহ।
#করোনাভাইরাস ডিজিজ ২০১৯ থেকে বাঁচার জন্য যা করবেন -
১. লোকজনের সমাবেশ থেকে দূরে থাকুন।
২. যারা অসুস্থ বা যাদের মধ্যে করোনাভাইরাসের কোন লক্ষণ প্রকাশ পেয়েছে তাদের থেকে ৬ ফুট দূরে অবস্থান করুন। অন্যদের থেকে কমপক্ষে ৩ ফুট দূরে থাকুন।
৩. সাবান পানি দিয়ে কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড হাত ধোন, অথবা এলকোহলযুক্ত স্যানিটাইজার (60% এলকোহল) ব্যবহার করুন।
৪. হাঁচি বা কাশির সময় টিস্যু দিয়ে মুখ ঢাকুন, না থাকলে আপনার কনুই দিয়ে মুখ ঢেকে হাঁচি-কাশি দিন।
৫. হাত পরিস্কার না করে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ করবেন না।
৬. খাবার, গ্লাস, বিছানা এবং অন্যান্য গৃহস্থলি আইটেম কারো সাথে ভাগাভাগি করবেন না।
৭. দৈনন্দিন যেসব স্থান/সমতল আপনাকে স্পর্শ করতে হয় সেগুলো প্রতিদিনই পরিস্কার করে জীবানুমূক্ত থাকুন।
৮. কাজ, স্কুল এবং পাবলিক স্থান থেকে দূরে থাকুন এবং বাসায় থাকুন। নিতান্ত প্রয়োজনে বাইরে যেতে হলো সাবধানতা অবলম্বন করুন। যদি আপনি অসুস্থ থাকেন তাহলে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট পরিহার করুন।
৯. কাঁচা মাংস বা ঠিকমত গরম করে রান্না করা হয় নাই সেধরনের খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
১০. জীবন্ত প্রাণী এবং কোন সমতল যেমন খোলা মার্কেটের, সিড়ির রেলিং ইত্যাদি স্পর্শ করা থেকে বেঁচে থাকুন।
১১. আক্রান্ত স্থানে ভ্রমন করার কথা মাথায়ও আনবেন না।
WHO এবং CDC সাধারণত সাধারনদের জন্য মাস্ক পরার পরামর্শ দেন না। যদি কোন ডাক্তার বা স্বাস্থ্যবিষয়ক পরামর্শদাতারা আপনাকে পড়ার নির্দেশ দেন তবে মাস্ক পড়ুন।

সর্দিজনিত সমস্যায় হোমিও চিকিৎসা


থেরাপিউটিকস-৫
---------------------------------
করোনাভাইরাস ডিজিজ ২০১৯
করোনা ভাইরাসের লক্ষণ সর্দিকাশি দিয়েই শুরু হয়। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা কোন রোগ ধরে হয় না লক্ষণসমষ্টি নিয়ে আমাদেরর ওষুধ দিতে হয়। শুরুতেই যদি করোনার প্রাথমিক লক্ষণগুলো + রোগীর ব্যক্তিগত লক্ষণ মিলিয়ে হোমিও ওষুধ প্রয়োগ করলে সমস্যা দ্রুতই কমে যায়, সেটা সাধারণ সর্দিকাশিই হোক বা Covid-19 এর কারনেই হোক, সমস্যা আর জটিলতার দিকে যাবে না।
প্রথমে আমরা সর্দিজনিত সমস্যায় বেশি ব্যবহৃত হোমিও ওষুধ সম্পর্কে জানবো।
#রোগের শুরুর ধাপে/প্রাথমিক পর্যায়ে Camphor, Aconite, Nux vom, Bryonia, Belladonna ওষুধগুলো বেশি নির্দেশিত হয়।
- প্রত্যেক্ষ বা পরোক্ষভাবে ঠাণ্ডার সংস্পর্শে যাওয়ার পর রোগী যদি মনে করে তার ঠাণ্ডা লাগবে তখন Camphor ০/১, ৬, বা ৩০ শক্তির কয়েকমাত্রা ঘন ঘন প্রয়োগ করলে অসুস্থতা থেকে বাঁচা যায়।
- শুষ্ক ঠাণ্ডার সংস্পর্শে আসার পর যদি জ্বর জ্বর লাগে, রোগীর মধ্যে অস্থিরতা প্রকাশ পায় তখন Aconite প্রয়োগ করতে হয়।
- সারাদিনই জ্বর জ্বর লাগা সাথে নাক বন্ধ, কপালে ব্যথা হলে Nux vomica
- নাক শুষ্ক, বন্ধ, নাকের গোড়াসহ কপালে ব্যথা, সঞ্চালনে/নড়াচড়ায় বাড়ে, ঠোট শুষ্ক, প্রচুর পিপাসা - Bryonia alba
- চোখ মুখ লাল, নাক থেকে সর্দিস্রাব, হঠাৎ রোগের আক্রমন, দপদপানি মাথাব্যথা - Belladonna
#রোগের দ্বিতীয় পর্যায়ে (Second stage), যখন নাক থেকে প্রচুর সর্দিস্রাব হতে থাকে তখন Merc sol, Allium cepa, Arsenic album বেশি নির্দেশিত হয়।
#তৃতীয় পর্যায়ে (Third stage): নাক থেকে ঘন হলুদ সর্দিস্রাব হলে Pulsatilla, Sulphur। মুখের স্বাদ ও নাকে গন্ধ না পেলে পালসেটিলা, ক্রনিক কেইসে Sulphur
#আসুন আরেকটু বিস্তারিতভাবে জানি -
[1] Camphor officinalis :
প্রাথমিক পর্যায়ে বেশি নির্দেশিত হয়। প্রত্যেক্ষ বা পরোক্ষভাবে শরীর ঠাণ্ডা হয়ে যায়, নাক বন্ধ থাকে, নাক শুষ্ক, সুচালো। কপালে ব্যথা করে, গলাব্যথা। ওষুধটি পানির সাথে মিশিয়ে ঘন ঘন প্রয়োগ করলে (Camphor 6, 2 hourly) এবং যথাসময়ে দিতে পারলে কয়েক ডোজেই রোগী ভাল হয়ে যায়।
ডা: টাইলার বলেন যে কারো যদি শরীর ঠাণ্ডা হয় (ঠাণ্ডার সংস্পর্শে গিয়ে বা যেকোন ভাবে), শরীর এখনো গরম হয়নি, সর্দিস্রাব এখনো দেখা দেয় নি তবে Camphor টিংচার চিনির সাথে মিশিয়ে শরীর গরম না হওয়া পর্যন্ত ঘন ঘন খেলে আর সর্দি দেখা দেয় না।
ক্যাম্ফর টিংচার বহু ওষুধের কার্যকারিতা নষ্ট করে দেয় তাই এর মাদার টিংচার অন্য ওষুধের সাথে না রেখে অন্য ঘরে রাখতে হবে। (Kent) [তবে উচ্চ শক্তির জন্য এ কথা প্রযোজ্য না]
এ অবস্থা যদি পার হয়ে যায় এবং রোগীতে জ্বর দেখা দেয় তাহলে Aconite দিতে হয়।
[২] Aconitum nap:
শুষ্ক ঠাণ্ডা বাতাসের সংস্পর্শে যাওয়ার পরপর জ্বর জ্বর লাগে, প্রথমে শীত করে শরীর ঠাণ্ডা হয়, তারপর প্রচণ্ড জ্বর আসে, গা জ্বরে পুড়ে যায়, ততটা ঘাম থাকে না। মাথাব্যথা করে, নাক থেকে শুরুতে খুব বেশি সর্দিস্রাব হয় না। নাকের গোড়ায় ব্যথা হয়, গলায় জ্বলে খোঁচা মারা ব্যথা হতে পারে। পরবর্তীতে নাক থেকে প্রচুর স্রাব হয়। অস্থিরতা, প্রচুর পিপাসা।
- শুষ্ক ঠাণ্ডার সংস্পর্শে গিয়ে হঠাৎ রোগের আক্রমন।
- নাক শুষ্ক, সর্দি বের হয় না, নাকের গোড়ায় ব্যথা
- খোলাবাতাসে ভাল থাকে, কথা বললে বাড়ে
- পরে, প্রচুর হাঁচি হয়, নাক থেকে গরম স্রাব হতে থাকে। সকালেই বেশি যায়।
- উচ্চ জ্বর, গলা ব্যথা। গলায় জ্বালা ও হুলফোটান ব্যথা।
- কাশি, শুষ্ক, আক্ষেপিক কাশি, রাতে পারে। কাশতে কাশতে গলা বসে যেতে পারে।
- নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস এর শুরুর দিকে এটি নির্দেশিত হয়।
- রোগী ভীত হয়ে পড়ে, উদ্বিগ্নতা ও মৃত্যুভয় দেখা দেয়, খুবই অস্থিরতা প্রকাশ পায়।
- করোনা ভাইরাসের সংবাদে যারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন তাদের জন্য এ ওষুধে উচ্চশক্তি কাজ দিবে।
[৩] Allium cepa:
- সর্দিস্রাব, নাক ও চোখে থেকে পানি পড়ে, সাথে মাথা ব্যথা করে।
- ঘন ঘন হাঁচি হয়, নাক থেকে যে স্রাব যায় সেটি ক্ষতকারি, নাক ও ঠোটে ঘায়ের মতো হয়ে যায়।
- চোখ থেকেও প্রচুর পানি পড়ে কিন্তু চোখের পানি ক্ষতকর না। (ইউফ্রোসিয়াতে এর উল্টো অর্থাৎ চোখের পানি ক্ষতকর কিন্তু নাকের পানি অক্ষতকর।)
- রোগী গরমকাতর, গরম ঘরে, আবদ্ধ কক্ষে বাড়ে, খোলা বাতাসে উপশম হয়। বিকালে সমস্যা বেশি হয়।
- পিপাসা
- ল্যারিক্স এর প্রদাহ হয়, কাশি দিলে মনে হয় স্বরনালী ছিড়ে যাবে। গলা চেপে কাশি দেয়। [hep, acon, dros, phos] [ML Tyler]
- ঠাণ্ডা বাতাসের নিশ্বাস নিলেই কাশি শুরু হয়।
শিশুদের ক্ষেত্রে প্রায়ই লাগে। নাকের প্রদাহজনি সর্দি, পরে প্রদাহ স্বরনালী, ব্রঙ্কাসে পৌঁছায়, কাশি দেখা দেয়। শ্বাস-প্রশ্বাসে মিউকাস জমে ঘরঘর শব্দ করে। [T.S. Iyer]
[৪] Belladonna
- আকস্মিক প্রবল রোগাক্রমন।
- নাকের সর্দি অবরুদ্ধ হয়ে প্রচণ্ড মাথাব্যথা করে।
- মুখে ও মাথায় রক্তের প্রাবল্য। চোখ লাল, মুখমণ্ডল রক্তিমাভ।
- মাথা গরম, হাত-পা ঠাণ্ডা।
- দপদপানি ব্যথা। সবকিছুতে যন্ত্রনার প্রাবল্য। যন্ত্রনা হঠাৎ আসে হঠাৎ যায়।
- বুকে সর্দি কম থাকে। গলা শুষ্ক।
- গলা যেন কাঁচা হয়ে গেছে, দেখতে চকচকে লাল।
- শুষ্ক কাশি, গলা ছিড়ে যায়। স্বরনালীর প্রদাহ, স্বরনালী ফুলে যায়, স্বরভঙ্গ দেখা দেয়। খুব ব্যথা করে।
- উচ্চ জ্বর, শুষ্ক। পিপাসা থাকে না।
[৫] Bryonia alba:
- প্রায়ই নাক থেকে শুরু হয়, হাঁচি হয়, নাকের প্রদাহ হয়ে সর্দিস্রাব হয়, চোখ থেকে পানি পড়ে, প্রথম দিন চোখে নাকে, মাথায় ব্যথা হয়। তারপর নাকের পিছনভাগ , গলা, স্বরনালি (larynx), আক্রান্ত হয়। গলা ভেঙে যায়, ব্রঙ্কাইটিস দেখা দেয় পরবর্তীতে প্লুরার প্রদাহ এবং শেষে নিউমোনিয়া দেখা দেয়। [ML Tyler]
- শুষ্ক আক্ষেপিক কাশি, রাতে বাড়ে, পানি পান ও খাওয়ার পর বাড়ে, গরম কক্ষে প্রবেশ করলে বাড়ে, গভীরভাবে শ্বাস নিলে বাড়ে।
- কাশিতে বুকে শুঁই ফোটানোর মত ব্যথা করে, সাথে মাথাব্যথা করে, কাশিতে যেন মাথা ফেটে যাবে এমন লাগে।
- ব্রায়োনিয়ার রোগী, খিটখিটে স্বভাবের, প্রচুর পানি পিপাসা থাকে, চুপচাপ শুয়ে থাকতে চায়, কথা বলতে চায় না।
- সমস্ত মিউকাস মেম্ব্রেন শুষ্ক হয়ে থাকে। ঠোক শুকিয়ে যায়।
- ঠাণ্ডা ও শুষ্ক আবহাওয়ায় বৃদ্ধি।
- Dr. Manish Bhatia, UK এর Society of Homeopath এ ওষুধটিকে COVID-19 এর প্রফাইলেকটিক হিসেবে ব্যবহার করতে বলেছেন।
[৬] Nux vomica:
- এটি গুরুত্বপূর্ণ একটি ওষুধ। Richard Pitcairn এ ওষুধটিকে বর্তমান করোনা ভাইরাসের প্রতিকার ও প্রতিরোধ ওষুধ হিসেবে সবার আগে বিবেচনা করেছেন।
- ঠাণ্ডার শুরুর পর্যায়ে ব্যবহৃত হয়। নাক বন্ধ, বা রাতে নাক বন্ধ হয়ে থাকে, দিনের বেলায়, গরম রুমে প্রচুর সর্দিস্রাব হয়। মাথার সামনের দিকে ব্যথা হয়।
- ঠাণ্ডা বাতাসের প্রতি খুবই সংবেদনশীল। গলা ব্যথা।
- খুব শীতকাতর রোগী, সামান্য নড়াচড়ায়, বা গায়ে আবরন সড়ালেই শীতার্ত হয়ে পড়ে। এমনকি প্রবল জ্বরের সময়ও আবৃত হয়ে থাকতে পছন্দ করে, নড়াচড়া করে না।
- একোনাইটের মতো শুষ্ক ঠাণ্ডা বাতাসের সংস্পর্শে রোগ দেখা দেয়, একোনাইট উদ্বিগ্ন আর নাক্স খিটখিটে।
- নাক বন্ধ হয়ে প্রচুর হাঁচি হয়, খোলাবাতাসে হাঁচি বাড়ে। খোলাবাতাসের সংস্পর্শে কাঁপতে থাকে। পানি পান করার পরও কাঁপতে থাকে।
- হাত পা, পিঠসহ সারাদেহে শীত লাগতে থাকে, গরম প্রয়োগেও শীত যায় না।
- নাক্স ভম এর রোগী খুব সংবেদনশীল বিশেষ করে, সামান্য বাতাস সহ্য হয় না, খিটখিটে স্বভাবের।
[৭] Mercurius sol:
- শীতে গায়ে কাটা দিয়ে উঠে। বিকালে বাড়ে, রাতে বাড়ে, বিছানায় বাড়ে।
- নাক থেকে পাতলা পানির মতো স্রাব হয়, সাথে হাঁচি। চোখ থেকে পানি পড়ে।
- গলাব্যথা, খোঁচামারা, হুলফোটান ব্যথা, সবসময় ঢোক গিলতে হয়, মুখে অনেক লালা জমে যায়।
- মুখ, নিশ্বাসে দুর্গন্ধ। লালাও দুর্গন্ধ।
- অল্পজ্বর কিন্তু প্রচুর ঘাম হয়, ঘামে জ্বর কমে না।
- নাকের সর্দি হাজাকর, সবুজাব বা পুজের মতোও হয়।
- গলা বসে যায়, শুষ্ক কাশি, গলায় খুসখুস করে।
- গরম ঘরে বৃদ্ধি পায় কিন্তু আবার ঠাণ্ডাও সহ্য করতে পারে না।
- জিহ্বা মোটা, থলথলে, দাঁতের ছাপ থাকে।
[৮] Gelsemium:
-1918-19 সালের ভয়াবহ স্প্যানিশ ফ্লুতে এ ওষুধটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়েছে। Society of Homeopath, UK, ব্রায়োনিয়ার সাথে জেলসিয়াম ওষুধকেও প্রিভেন্টিভ ওষুধ হিসেবে রিকমেন্ড করেছে।
- নিদারুন দুর্বলতা, মাথাঘোরা, শরীর থরথর করে কাঁপে।
- জ্বরের সাথে অল্প পিপাসা থাকে।
- গরম আদ্র আবহাওয়ায় সর্দি।
- নাকের স্রাব হাজিয়ে যায়, নাকে ক্ষত হয়। নাক দিয়ে যেন গরম তপ্ত পানি বের হচ্ছে এমন লাগে।
- জেলসের সর্দি ধীরে ধীর বিকাশ লাভ করে।
- মৃদু শীতকালের ঠাণ্ডা-সর্দি ও জ্বরে এটি বেশি লাগে।
- বিরক্তিকর, খুসখুসে কাশি, আগুনের পাশে থাকলে কমে।
- সারা শরীরে ভারবোধ, খুব দুর্বল লাগে।
- পিঠে শীত লাগে, শীত পিঠ বেয়ে উপরে ওঠে আবার নামে।
- মাথাব্যথা।
- ফ্লুর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ওষুধ [ML Tyler]
[৯] Arsenicum album:
- ভারতের AYUSH এ ওষুধটিকে COVID-19 এর প্রতিরোধক ওষুধ হিসেবে খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
- নাক থেকে পাতলা স্রাব যায়, ক্ষতকারি স্রাব, উপরের ঠোট হাজিয়া যায়। নাক সময় বন্ধ থাকে, খুব বেশি হাঁচি হয়। হাঁচি দিলেও নাক খোলে না।
- নাকের মধ্যে একটা স্থানে সুড়সুড় করে যেন পালক দিয়ে সুড়সুড়ানি দিচ্ছে। হাঁচির পরও সুড়সুড়ানি কমে না, হাঁচি দিতেই থাকে।
- নাকেই ঠাণ্ডা যেনে আগে লাগে, আবহাওয়ার পরিবর্ততে হাঁচি হয়। প্রথমে নাকে ঠাণ্ডা লাগে এরপর ঠাণ্ডা বুকে যায়।
- আর্স সবসময়ই শীতে কাতর হয়, বাতাসের ঝাপটা সহ্য করতে পারে না।
- ঠাণ্ডায় যেন জমে যায়, যতই কাথা গায়ে দেয় ঠাণ্ডা যায় না। আগুনের কাছ থেকে সরে না। রক্ত যেন বরফের নালি দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এমন লাগে।
- নাক জ্বলে, গলা জ্বলে, গরম পানি খেলে জ্বালা কমে।
- জ্বরের সময় শরীর খুব গরম হয়, তখন মনে হয় রক্তের নালি দিয়ে যেন ফুটন্ত পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
- শীতে বাড়ে, মধ্যরাত, দুপুরের রোগ বাড়ে, রাতে বাড়ে, গরমে উপশম, গরম কক্ষে ভাল অনুভব করে।
- অস্থিরতা, ঘন ঘন অল্প পরিমানে পানি পান করে, মৃত্যুভয়।
[১০] Rhus toxicodendron:
-ঠাণ্ডা আদ্র আবহাওয়া থেকে রোগের উৎপত্তি। বিশেষ করে ঘামের সময় যদি ঠাণ্ডা আদ্র আবহাওয়ার সংস্পর্শে যায় তখন ঠাণ্ডা লেগে যায়। (Dulcamara)
- নাসাস্রাব; গলা লাল হয়ে ফুলে যায়।
- প্রত্যেক ঠাণ্ডাতে নাক বন্ধ হয়ে যায়।
- ঠান্ডায় বাড়ে, গরমে কমে।
- গাঢ় হলদে, দুর্গন্ধযুক্ত শ্লেষ্মা স্রাব হয়।
- রাতে, বিশ্রামে বাড়ে, রাতে অস্থিরতা দেখা দেয়, ভয় পায়।
- স্বরভঙ্গ হয়, গলা যেন ছিলে গেছে, খসখসে; কথা বলার শুরুতে বাড়ে কিছু কথা বলার পর স্বরভঙ্গ কমে।
- ঠাণ্ডা পানির পিপাসা, বিশেষ করে রাতে; কিন্তু ঠাণ্ডা পানি খেলে শীত লাগে এবং কাশি দেখা দেয়।
- অনাবৃত থাকলে বাড়ে।
- শরীর ব্যথা, যেন হাড় ব্যথা করে <রাতে, বিকালে; হাচি কাশিও বাড়ে।
[১১] Hepar Sulph:
- শুষ্ক ঠাণ্ডা বাতাসের সংস্পর্শে ঠাণ্ডা-সর্দি লাগে (acon,nux v), নাক, কান, গলা, স্বরনালি, বুক থেকে শ্লেষ্মা বের হয়।
- নাকে ঠাণ্ডা, প্রচুর স্রাব, যতবারই ঠান্ডা বাতাসের মধ্যে যায় ততবারই হাঁচি হয়।
- হাঁচি, নাক থেকে প্রথমে পাতলা পানির মতো স্রাব যায়, পরবর্তীতে স্রাব ঘন, হলদে হয়, দুর্গন্ধ শ্লেষ্মা।
- ঠাণ্ডার সংস্পর্শে গলা বসে যায়, কাশি হয়, নাক দিয়ে ঠান্ডা বাতাস প্রবেশ করলেই বাড়ে, হাত বা পা কাথার বাইরে বের করতে পারে না, বের করলেই কাশি।
- ঘাম বেশি, সারা রাত ঘামে, তাতে কোন উপশম হয় না।
- অতিসংবেদনশীল, স্পর্শ সহ্য হয় না, ব্যথায় রোগী খুব কাতর হয়ে পড়ে, ঠাণ্ডা বাতাস একদম অসহ্য। রুমের দরজা জানলা বন্ধ করে কোন ফাঁকফোকর থাকলে সেটাও বন্ধ করে।
- ঘরের মধ্যে কেউ যদি ঠাণ্ডা প্রবেশ করায় তাকে মারতে চায়।
- আদ্র গরম আবহাওয়ায় ভালবোধ করে।
- ডা: ফেরিংটন এ ওষুধকে রোগের শুরুতে ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন, তাতে নাকের সর্দি চাপা পড়ে বুকে জমে যেতে পারে। যদি ঠান্ডা বুকে জমে যায় তাহলে পরবর্তীতে ফসফরাস ভাল কাজ করে এবং রোগীকে আরোগ্য করে।
[১২] Phosphorus
- একবার নাক থেকে প্রচুর সর্দিস্রাব হয় পরক্ষনেই নাক বন্ধ হয়ে যায়। পর্যায়ক্রমে এ অবস্থা চলতে থাকে। (নাক্স, পালস)
- গলাব্যথা, মাথাব্যথা, জ্বরজ্বর লাগে।
- নাকের সর্দি শুকিয়ে নাকে চটা পড়ে, সেটা শক্তভাবে নাকের ভিতর আটকে থাকে।
- নাকের একটা ছিদ্র খোলা থাকলে আরেকটা ছিদ্র বন্ধ থাকে।
- হাঁচি দিলে বুকে ও মাথায় ব্যথা করে।
- নাক ঝাড়লে রক্ত আসে, নাক লাল, চকচকে, ব্যথাযুক্ত।
- বুকে চাপবোধ
- শক্ত কাশি, বুক চেপে ধরে, শুষ্ক, যন্ত্রনাপূর্ণ, খোলা বাতাসে বাড়ে।
- ফসফরাসের ঠান্ডা বুক বা স্বরনালি থেকেই শুরু হয়।
- ঠান্ডা পানির পিপাসা, একাকী থাকেতে চায় না, লবন খায়, অন্ধকারে ভুতের ভয়। ঝড়বৃষ্টির ভয়।
[১৩] Pulsatilla:
-সর্দি হাজাজনক নয়, ঘন, হলুদ, নাক ও গলা থেকে নি:সৃত হয়।
- ঘ্রান ও খাবারের স্বাদ পায় না। অথবা মুখ তিতা হয়ে থাকে।
- পিপাসাহীন, ক্ষুধা কম।
- রাতে নাক বন্ধ হয়ে থাকে, সকালে নাক থেকে স্রাব যায়।
- খোলা বাতাসে নাক খুলে যায়, ঘরের মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়। তাই যখনই ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে তখনই খুব শ্লেষ্মা যায়, এবং সন্ধ্যায় বৃদ্ধি।
- নরম স্বভাবের রোগী, ক্রন্দনশীল, সান্ত্বনা চায়, খোলা বাতাস ও সঞ্চালনে উপশম।
[১৪] Sulphur:
- সমস্যা যখন ক্রনিক হয়।
- যাদের নাকে সহজেই প্রদাহ হয়ে সর্দিস্রাব হয়। অবিরাম হাঁচি, নাক বন্ধ।
- নাক থেকে ঘন দুর্গন্ধ স্রাব হয়।
- একোনাইটের রোগী ব্যর্থ হলে সালফার, বা অন্য ওষুধে যখন কাজ না করে তখন এটি মাথায় আনতে হয়।

ইনফ্লুয়েঞ্জা- হোমিও চিকিৎসা

থেরাপিউটিকস - ৬
----------
বিশ্বব্যাপি সংক্রামক রোগে মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগ। বিশেষ করে বয়ষ্ক মানুষ এবং যারা অন্যান্য শ্বাসযন্ত্রের রোগ, হাইপ্রেসার, ডায়াবেটিস, হৃদরোগে ভোগে শারীরিকভাবে দুর্বল তাদের জন্য ইনফ্লুয়েঞ্জা ভয়াবহ রূপ ধারণ করে।
বর্তমানে COVID-19 রোগটিও ইনফ্লুয়েঞ্জা। ইনফ্লুয়েঞ্জার জটিলতায় নিউমোনিয়া দেখা দেয় এবং মৃত্যুর কারণ হয়। প্রচলিত চিকিৎসায় ভ্যাক্সিন দিয়ে এটি প্রতিরোধ করার চেষ্টা করা হয় কিন্তু সেটার কার্যকারিতা অনেক ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হয়। কারণ এই ভাইরাসটি প্রতিনিয়ত তার চেহেরা পরিবর্তন করে (mutation)। এসব ভ্যাক্সিনের লং টার্ম খারাপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে। সঠিক ওষুধ নির্বাচন করতে পারলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে রোগী ভাল হয়, জটিলতার দিকে যায় না।
হোমিওপ্যাথিকও ওষুধ লক্ষণ সাদৃশ্যে প্রয়োগ করতে হয়, রুটিনমাফিক কোন নির্দিষ্ট ওষুধ প্রয়োগ করা থেকে বিরত থাকুন। রোগের শুরুতে অনেকে একোনাইট বা কোন স্পেসিফিক ওষুধ প্রয়োগ করলে রোগীর লক্ষণ অস্পষ্ট হয়ে যায়, তখন সঠিক ধারায় চিকিৎসা না হওয়ায় রোগ জটিল আকার ধারণ করতে পারে। তাই প্রয়োজনে ওষুধ নির্বাচনের ক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো না করে সঠিক চিত্র পেতে অপেক্ষা করুন। কোন ওষুধ প্রয়োগ করার পর উন্নতি দেখা দিলে ওষুধ বন্ধ রেখে অপেক্ষা করুন (নিউ পটেন্সির ক্ষেত্রে ওষুধ চালিয়ে যাবেন যদি শেষে আবার বৃদ্ধি দেখা দেয় তখন ওষুধ বন্ধ করে দিবেন)। সঠিক ওষুধ প্রয়োগের স্বল্প সময়ের মধ্যেই উন্নতি লক্ষ করা যায়। ২৪ ঘন্টার পরও যদি উন্নতি না হয় তাহলে মনে করবেন ওষুধ সুনির্বাচিত হয় নি। সেক্ষেত্রে কেইস হিস্টরি নতুন করে নিবেন। আবার কোন ওষুধ প্রয়োগের পর যদি দেখেন রোগ লক্ষণ কমে গিয়েছিল আবার দেখা দিচ্ছে সেক্ষেত্রে ওষুধের শক্তি বৃদ্ধি করবেন। অনেকসময় প্রয়োগকৃত ওষুধের অনুপূরক/complementary কোন ওষুধ লাগতে পারে।
সাধারণত ৩০ শক্তি দিনে ৩ থেকে ৪ বার ব্যবহার করা যায়। ওষুধ পানিতে মিশিয়ে শক্তি পরিবর্তন রীতিতে প্রয়োগ করতে হবে। নিউ পটেন্সির ক্ষেত্রে ০/১ বা ০/২ থেকে শুরু করবেন।
আজকে আমরা #ইনফ্লুয়েঞ্জাতে বেশি ব্যবহৃত হয় এমন কিছু ওষুধ নিয়ে আলোচনা করবো।
[১] Arsenicum album:
- ইনফ্লুয়েঞ্জার সাথে পাকস্থলি-অন্ত্রের প্রদাহ থাকে, বমি ও পাতলা পায়খানা হয়।
- জ্বর: উচ্চ জ্বর হয় (১০২ - ১০৪ ডিগ্রি), ইনফ্লুয়েঞ্জার শুরুর লক্ষনের ২/৩ পরেই উচ্চ জ্বর শুরু হয়।
- মুখমণ্ডল গরম, খোলা বাতাস চায় যদিও শরীরে শীত লাগে। বৃদ্ধি: মধ্যরাতে বা রাত ১ টার দিকে বৃদ্ধি, দুপুর, ১ টার দিকে বৃদ্ধি
- জ্বরের পর কাঁপুনি ও শীত করতে থাকে।
- শীত: অত্যধিক শীত করে, শীতে শরীর কাঁপতে থাকে। বৃদ্ধি: পানি পান বা খাবার পর, পায়খানা করার আগে, সঞ্চালনে, পরিশ্রমে।
- সার্বদৈহিক: রোগী অল্প অল্প করে বারবার পানি পান করে। জিহ্বায় পাতলা সাদা প্রলেপ থাকে। সুস্পষ্ট অস্থিরতা, মাঝে মাঝে রোগী অত্যধিক দুর্বল হয়ে কোলাপস অবস্থা দেখা দিতে পারে।
- মানসিক: খুব বেশি উদ্বিগ্ন। মনে করে সে এ অবস্থা থেকে আর ভাল হবে না, মারা যাবে। তাই সবসময় পাশে কাউকে চায়।
[২] Bryonia alba:
- ধীরে ধীরে রোগের বিকাশ লাভ করে। সাথে শরীরে খুব ব্যথা হয় (চাবায়/কামড়ায়)।
- জ্বর: জ্বরের উত্তাপের সাথে শরীরে বেশ ঘাম হয়।
- শীত: রাগের পর শীত দেখা দিতে পারে। হাত ও পায়ের আঙ্গুলের মাথা থেকে শীত শুরু হয় বা কখনও ঠোট থেকেও শীতভাব শুরু হতে পারে। শরীরের ডান পাশে শীত করে।
- সার্বদৈহিক: সাধারণত গরম কাতর, গরম কক্ষ অপছন্দ। প্রচুর পিপাসা, অনেকক্ষন পরপর একসাথে অনেক পরিমানে পানি পান করে। রাত ৯ টার দিকে তার লক্ষণ বাড়ে।
- বৃদ্ধি: সমান্য নড়াচড়াতেও রোগ বাড়ে। ঝাঁকিতে বাড়ে।
- অস্থিরতা অনুভব করে কিন্তু সামন্য নাড়াচাড়াতেও সমস্যা বেড়ে যায় (মাথাব্যথা ছাড়া)
- স্থানিক লক্ষণঃ মাথার পিছনভাগে বা মাথার সামনের বাম দিকে প্রচণ্ড মাথাব্যথা হয়।
- জিহ্বাঃ সাদা বা ময়লাটে বাদামী রঙের প্রলেপযুক্ত, বিশেষ জিহ্বার মধ্যখানে।
- জ্বালাকর সর্দিস্রাব।
- বুক ও পিঠ ব্যথা।
- মানসিক: খিটখিটে স্বভাব, স্থূলবুদ্ধি (dull), কথার উত্তর দিতে চায় না।
- বাড়ী যেতে চায়। প্রলাপের সময় বাড়ী নিয়ে যেতে বলে, ব্যবসা বিষয়ক কথা বলে। অর্থনৈতিক চাপে থাকার কারনে লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে।
[৩] Eupatorium perfoliatum:
উচ্চ জ্বরের সাথে ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং সাংঘাতিক শরীর ব্যথা। রোগী ব্যথা সহ্য করতে পারে না।
জ্বর: উচ্চ জ্বর, সাধারণত ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইটের উপরে।
শীত: সকাল ৯ টার দিকে শীত লাগা শুরু হয়। কোমর থেকে শুরু হয়।
অত্যধিক শীত, শীতে শরীর কাঁপতে থাকে। পানি পানের পর বাড়ে।
সার্বদৈহিক: শীতকাতর এবং ঠাণ্ডা বাতাস সহ্য হয় না।
পিপাসা: ঠাণ্ডা পানির পিপাসা (শীত লাগে এবং এমনি শীতের সময়ও ঠাণ্ডা পানি পান করতে চায়।)
শীত লাগার আগে পিপাসা লাগে।
ঠাণ্ডা খাবার ও আইস ক্রিম খেতে চায়।
ঘাম তেমন হয় না।
মাংস এবং বিশেষ করে হাড়ে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। রোগী মনে করে ব্যথায় হাড় ভেঙে যাবে।
স্থানীয় লক্ষণ: জ্বরে তীব্রতার সময় প্রচণ্ড মাথাব্যথা করে।
মাথা খুব ভারী লাগে, মাথা ব্যথা হয়, হাত দিয়ে মাথা বালিশ থেকে ওঠাতে হয়।
ইনফ্লুয়েঞ্জাতে নাক থেকে প্রচুর পরিমানে পানির মতো সর্দিস্রাব হয়।
বমিভাব ও বমি; সঞ্চালনে বাড়ে, শীত লাগা শুরু হবার আগে বাড়ে।
উত্তাপ ও শীতাবস্থার মাঝে পিত্তবমি হয়।
প্রচণ্ড যন্ত্রনাপূর্ণ কোমর ব্যথা দেখা দেয়।
মানসিক: ব্যথায় মরিয়া হয়ে উঠে, গোঙায়।
[৪] Belladonna:
ইনফ্লুয়েঞ্জা খুব দ্রুততার সাথে শুরু হয় এবং ভীতিজনক উচ্চ জ্বর থাকে।
জ্বর: জ্বর প্রায়ই ১০৫ ডিগ্রী ফা. পর্যন্ত উঠে।
বিকাল ৩ টায় বাড়ে, প্রলাপ বকে।
শীত: বাহু বা হাত থেকে শীত শুরু হয়।
সার্বদৈহিক: মুখমণ্ডল লাল হয়ে যায়, চোখের তারা প্রসারিত থাকে, চোখ চকচক করে।
বৃদ্ধি: ঝাঁকি, সঞ্চালনে।
হাত-পা বরফের মথো ঠাণ্ডা থাকে কিন্তু মুখমণ্ডল ও শরীর গরম থাকে।
পিপাসাহীন। লেবু ও লেবুস্বাদযুক্ত পানীয় পান করতে চায়।
স্থানীক লক্ষণঃ প্রায় প্রচণ্ড মাথাব্যথা থাকে, দপদপানি ব্যথা, পালস খুব জোরে হয়।
ডানপাশে মাথাব্যথা, চোখ ও গলাব্যথা।
মানসিকঃ খুব দ্রুত রোগীর মাঝে প্রলাপ দেখা দেয় অথবা দৃষ্টিভ্রম (hallucination) হয়।
[৫] Gelsemium sempervirens:
অত্যধিক দুর্বলতা ও নিদ্রালুতার সাথে ইনফ্লুয়েঞ্জা দেখা দেয়।
জ্বর: ধীরে, মন্থর গতিতে জ্বর দেখা দেয় – ১ থেকে ৩ দিনে বিকাশ লাভ করে।
শীত: পিঠে শীত অনুভব করে, পিঠ দিয়ে শীত উপরে নিচে উঠানামা করে।
একবার শীত পরক্ষনই গরমের উচ্ছাস। শীত ও উত্তাপ পর্যায়ক্রমে দেখা দেয়।
শীতে সুক্ষভাবে কাঁপুনি হয়।
সার্বদৈহিকঃ সকাল ১০টায় বৃদ্ধি
পিপাসা কম
খুব দুর্বলতা, দুর্বলতার কারনে কাপে, হাত-পা ভারী লাগে, চোখের পাতা এবং মাথায় ভারীবোধ।
সার্বিকভাবে ঘুমঘুম ভাব।
স্থানীয় লক্ষণঃ মাথাব্যথা, মাথার পিছনভাগে শুরু হয়ে কপালে বিস্তৃত হয়।
চোখের পাতা খোলে রাখতে পারে না, বা অর্ধেক খোলা থাকে।
রঞ্জিত মুখমণ্ডল, কালচে লাল বর্ণের। (dusky red)
জিহ্বা: হলদে প্রলেপযুক্ত
মানসিক: নিস্তেজতা, মানসিক স্থূলতা (dull), কুয়াশাচ্ছন্ন।
[৬] Pyrogenium:
উচ্চ জ্বরের সাথে (103° F) ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং শরীর ব্যথা।
জ্বর: উচ্চ জ্বর যেটি দ্রুত পরিবর্তিত হয়।
শীত: পিঠের দুই অংসফলক (scapulae) মাঝখান থেকে শীত লাগা শুরু হয়।
শীত শরীরে অনেক ভিতরে অনুভব হয় অথবা হাড়ের মধ্যে শীত লাগে।
সার্বদৈহিক: বেদনা/টাটানি ব্যথা (sorness); এমন কি বিছানা খুব শক্ত লাগে।
ঠাণ্ডায় বৃদ্ধি, গরমে, গরম স্নানে, সঞ্চালনে উপশম।
জ্বরের সময় খুব বেশি অস্থিরতা প্রকাশ পায়।
জ্বরের তাপমাত্রার সাথে নাড়ীর সামাঞ্জস্যতা থাকে না অর্থাৎ সামান্য জ্বরে অস্বাভাবিক দ্রুত নাড়ী (১৪০/মিনিট) বা উল্টোটা হতে পারে।
ঘাম বা স্রাবে দুর্গন্ধ।
স্থানীয় লক্ষণঃ মাংসপেশির ব্যথা, সঞ্চালনে উপশম
হৃদযন্ত্র নিয়ে অস্বাভাবিক সচেতনতা (abnormal consciousness of the heart)
মানসিক: মনে করে সে ছিন্নভিন্ন হয়ে আছে বা দ্বিগুণ (double) [Baptisia]
[৭] Baptisia tinctoria:
ইনফ্লুয়েঞ্জা দ্রুত অগ্রসর হয়, অবসন্ন হয়ে পড়ে, বুদ্ধিজড়তা দেখা দেয়, চেহেরা কালচে লাল হয়ে যায়।
অগ্রসর/advanced ইনফ্লুয়েঞ্জা, সাথে মানসিক খর্বতা/স্থূলবুদ্ধিতা, এমন কি সংজ্ঞাহীনতা (stupor)
কথা বলার মাঝে ঘুমিয়ে পড়ে।
গলা ও জিহ্বা শুষ্ক এবং প্রলেপযুক্ত; পুঁজ হয় এবং প্রচণ্ড দুর্গন্ধযুক্ত যদিও কোন ব্যথা থাকে না।
সেপ্টিক অবস্থা। মনে করে বিছানায় দেহ ছিন্ন ভিন্ন হয়ে আছে বা নিজেকে দুই জন মনে করে।
“পাকস্থলির ফ্লু” – দুর্গন্ধ উদরাময় এবং উদগার হয়।
ইনফ্লুয়েঞ্জার পর মাস্টয়েড হাড়ের প্রদাহ (mastoiditis)
শরীর টাটানি ব্যথা/চাবানি ব্যথা, বিছানা শক্ত অনুভব করে, মোটেই আরাম পায় না।
শুধু তরল খাবার খেতে পারে, শক্ত খাবার খেতে গেলে উল্টে আসে, বমি হয়ে যায়।
বৃদ্ধি: আদ্র গরমে, কুয়াশা, কক্ষের মধ্যে বৃদ্ধি। চাপে বৃদ্ধি, ব্যথার কথা চিন্তা করলে বাড়ে।
[৮] Nux vomica:
সকল ধরনের উদ্দীপনার (আলো, শব্দ, গন্ধ) প্রতি সংবেদনশীল।
জ্বর: উচ্চ জ্বর, দ্রুত বাড়ে – প্রথম দিন খুব জ্বর উঠে।
মুখমণ্ডল জ্বলে, মুখে খুব তাপ কিন্তু তারপরও মুখ ঢেকে রাখে।
শীত: মারাত্মক শীত, প্রচণ্ড শীতে কাপতে থাকে।
অনাবৃত হলেই শীত লাগে বা রোগী আবরনের নিচে নাড়াচাড়া সময় বাতাসের সামন্য সঞ্চালনেই শীত লাগে।
সার্বদৈহিক: সার্বিকভাবে শীতকাতর এবং উত্তাপে কমে।
আলো, শব্দ, গন্ধ সহ্য করতে পারে না, এমন কি তার ত্বক খুব সংবেদনশীল হয়ে পড়ে।
গরম খাবার ও পানীয় পান করতে চায়।
স্থানীক লক্ষণঃ তীব্র মাথাব্যথা। গলাব্যথা, গলার ভিতরে যেন ছুলে গেছে।
বমিবমি ভাব, বমি করার পর বমিভাব একদম থাকে না।
শরীরের ব্যথা গরম প্রয়োগে কমে।
মানসিক: আতি উত্তেজনাপ্রবণ ও সংবেদনশীল রোগী। খুব খিটেখিটে স্বভাবের হয়। মাথা থেকে কাজের চিন্তা বাদ দিতে পারে না; ঘুম হয় না।
[৯] Rhus toxicodendron
ইনফ্লুয়েঞ্জা সাথে নিদারুন যন্ত্রনা, শরীর ব্যথা এবং অস্থিরতা।
জ্বর: মধ্যম মাত্রা থেকে উচ্চ জ্বর, প্রায় শরীর কোন কারনে ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া থেকে শুরু হয়।
শীত: শরীর অনাবৃত হলেই শীত লাগে বা বাতাসের ঝাপটায় শীত লাগে। যেন শরীরে ঠাণ্ডা পানির ছিটা দিচ্ছে।
সার্বদৈহিক: সারা শরীরেই তীব্র ব্যথা। শরীর আড়ষ্ট হয়ে যায় সেজন্য রোগী শরীর মোচরায়, আড়মোড়া ভাঙে (stretch)। সার্বক্ষনিক সঞ্চালনে গাব্যথা কমে। রোগী শীতকাতর। গরম স্নানে, গরম প্রয়োগে এবং গরম পানীয় পানে কমে। পিপাসা – অল্প অল্প গরম পানি পান করে, কদাচিৎ ঠাণ্ডা পানিও পান করতে পারে।
স্থানীয় লক্ষণঃ জিহ্বার অগ্রভাব ত্রিকোনাকার লাল। জ্বরের সাথে ঠোটে হার্পিসের ফোস্কা উঠে (জ্বরঠোসা)। গলাব্যথা। উপশম: গরম পানীয়ে, অবিরাম ঢোক গেলায়।
মাংসপেশীর চাবানি ব্যথা, জয়েন্টের ব্যথা, ঠাণ্ডায় বাড়ে গরমে কমে।
মানসিক: উদ্বিগ্নতা ও অস্থিরতা; ইনফ্লুয়েঞ্জাতে দেখা যায়।
[১০] Oscillococcinum:
ফ্লুর শুরুতে বেশি ব্যবহৃত হয়। অনেক সময় প্রতিরোধক ওষুধ নিষেবে ব্যবহৃত হয়। ডা: মরিসন যেকোন ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রতিরোধক ওষুধ হিসেবে Oscillococcinum এবং Influenzinum ওষুধ সাজেস্ট করেন।
উদ্বিগ্নতা, ফ্যাকাশে চেহেরা; কাপতে থাকে, মাথার মধ্যে বদ্ধমূল ধারণা; একগুয়েমি; বারবার হাত ধোয়। ঝড় খুব ভয় পায়।
চোখ ও নাক থেকে স্রাব যায়; নাক বন্ধ, হাঁচি; সিরামের মতে বা পুঁজের মতো শ্লেষ্মাস্রাব হয়।
ফ্রন্টাল সাইনাসে ব্যথা।
শুষ্ক খুসখুসে কাশি; উভয় কানে বিদ্ধকর ব্যথা, সাথে কানে কম শোনে।
[১১] Eucalyptus globulus
ইনফ্লুয়েঞ্জার সাথে দুর্বলকর ঘাম।
পানির মতো সর্দিস্রাব এবং নাক বন্ধ থাকে; পরবর্তীতে পুঁজের মতো স্রাব।
মুখগহ্বর ও গলার ভিতর সাদা ঘা দেখা দেয়।
পেটের উপরিভাগে (epigastrium) ভারী লাগে বা হৃৎস্পন্দন হয়।
ইনফ্লুয়েঞ্জার পর শ্বাসযন্ত্রের রোগ দেখা দেয়।
প্রচণ্ড গলায় খুসখুস করে কাশি হয়।
[১২] Mercurius solubilis
ডা: বোরলেন্ডের ইনফ্লুয়েঞ্জার পছন্দের ওষুধ।
বিশেষ করে যে ইনফ্লুয়েঞ্জা পরিবর্তিত হয়ে পুঁজযুক্ত সাইনুসাইটিস বা ব্রঙ্কাইটিস হয়।
গলবিলের প্রদাহ, সাথে দুর্গন্ধযুক্ত শ্বাস-প্রশ্বাস, প্রচুর লালাস্রাব, ময়লাযুক্ত জিহ্বা।
প্রচুর ঘাম, ঘামে গন্ধ, ঘামলে বৃদ্ধি; অথবা ঘামলে কোন উপশম হয় না।
ঠাণ্ডা বুকে বসে যায়।
[১৩] Ferrum phosphoricum
ইনফ্লুয়েঞ্জার জ্বর কয়েকদিন ধরে চলতে থাকে।
উচ্চ জ্বর, অবসন্নতা কিন্তু স্থানীয়ভাবে অল্প লক্ষণ প্রকাশ পায়।
ডান পাশ আক্রান্ত হয় – মাথাব্যথা, বুকের ব্যথা, গলবিলের প্রদাহ ডানপাশে দেখা দেয়।
[১৪] Causticum
কাশি, শ্বাস প্রশ্বাসের লক্ষণ থাকে।
সারাশরীরে কামড়ানি, থেতলানো ব্যথা (sore and bruised pain)
ঠাণ্ডা পানির পিপাসা, তাতে জ্বর কমে।
স্থানীয় লক্ষণ: ভোঁতা, চেপে ধরার ন্যায় মাথাব্যথা। ইনফ্লুয়েঞ্জার সময় চোখ থেকে পানি পড়ে।
সর্দিস্রাব ক্ষতকারি, গলা ভেঙে যায়।
কাশিতে কফ বের হয় না; বার বার জোরে কাশতে থাকে কফ বের করার চেষ্টা করে, কফ বের হলে উপশম পায়।
কশির সময় প্রস্রাব হয়ে যায়।
ঘাড় আড়ষ্ট হয়ে পড়ে – জ্বরের সময়।
[১৫] Chelidonium majus
ইনফ্লুয়েঞ্জার সাথে ফুসফুস ও পরিপাক নালীর লক্ষণ থাকে।
সার্বিক: পিপাসা; বিশেষ করে গরম পানি পান করতে চায়।
মাংসপেশির ব্যথা, সঞ্চালনে বাড়ে।
স্থানীয় লক্ষণ: মাথার পিছনে তীব্র ব্যথা অথবা ডান চোখের উপরে ব্যথা।
মুখমণ্ডলে শুষ্ক উত্তাপ।
ইনফ্লুয়েঞ্জার সময় নাক, মুখ এবং গলায় শুষ্ক থাকে।
জিহ্বা শুষ্ক, বাদামী এবং ফাটাফাটা।
উদগার ও বদহজম
শ্বাসকষ্ট, বুকে চাপবোধ, বিশেষ করে ডান বুকে।
[১৬] China officinalis
ইনফ্লুয়েঞ্জা সাথে জ্বরে সময়ে অতিসংবেদনশীলতা।
বিশেষকরে ত্বক অতিমাত্রায় স্পর্শকাতর থাকে।
সুস্পষ্ট মাথাব্যথা, জোরে প্রেসার দিলে মাথাব্যথার উপশম হয়।
শীত করার সময় মুখমণ্ডল মরা মানুষের মতো ফ্যাকাশে হয় (অথবা লালে রঞ্জিত হয়)।
ফ্লুর সময় পেট ফাপা ও উদরাময় দেখা দেয়।
প্রথমে শীত করে, তখন পিপাসা লাগে এরপর জ্বর আরম্ভ হয়, তারপর আবার পিপাসা লাগে।
[১৭] Apis mellifica
উচ্চ জ্বর (over 102° F) সাথে মুখে খুব উত্তাপ, লাল, মুখ খোলা রাখতে চায়।
শুষ্ক, বিরতিহীন উত্তাপ, মুখমণ্ডলে রক্তসঞ্চয় হয়, ফুলে যায়; মোটেই ঘাম থাকে না, রোগী বেশ ঘাম হওয়ার জন্য ব্যকুল হয়ে পড়ে।
ঘামের সাথে শুষ্ক তাপ পর্যায়ক্রমে আসে।
পিপাসাহীন
গলবিলের তীব্র প্রদাহ, আলাজিহ্বা ফুলে যায়, ঠাণ্ডা পানীয়তে উপশম।
সকল লক্ষণ ঠাণ্ডায় ও ঠাণ্ডা প্রয়োগে কমে।
[১৮] Arnica montana
সারাশরীর ফ্লুর সাথে ব্যথা করে।
কোন আরামদায়ক অবস্থা খুঁজে পায় না; বিছানা শক্ত লাগে।
মাথা খুব গরম কিন্তু শরীর ঠাণ্ডা।
দুর্গন্ধযুক্ত শ্বাস-প্রশ্বাস এবং উদগারে পঁচা ডিমের মতো গন্ধ।
[১৯] Asclepias tuberosa
ইনফ্লুয়েঞ্জাতে রোগী খুবই দুর্বল হয়ে পড়ে, হাটতে পারে না।
ফ্লুর সময় বা ফ্লু দীর্ঘায়িত হলে প্লুরায় ব্যথা হয় যা তীরের বেগে অন্যস্থানে ধাবিত হয়।
বৃদ্ধি: শুয়ে পড়লে, বিশেষ করে বামপাশে। হাতের নড়াচড়ায়।, গভীরভাবে শ্বাস নিলে।
উপশম: সামনের দিকে ঝুকলে, হাটার সময় ছোট করে শ্বাস-প্রশ্বাস কাটলে।
[২০] Sulphur
বেশ কিছুদিন ধরে ইনফ্লুয়েঞ্জায় ভোগছে, রোগী এখন পরবর্তী ইনফেকশনে ধাবিত হচ্ছে, ব্রঙ্কাইটিস দেখা দিয়েছে।
শীতকাতর কিন্তু প্রায়ই গরমে বাড়ে; সামান্য গরমে ঘাম হয়।
চটচটে উস্কুখুস্কু তৈলাক্ত চুল।
রোগ আংশিক ভাল হয়ে আবার দেখা দেয়। উপযুক্ত ওষুধে কাজ না হলে।
শরীরে তাপের উচ্ছাস, বারবার হয়।
খোলাবাতাশ সহ্য হয় না; বাতাসের ঝাঁপটা সহ্য করতে পারে না; ধোয়া ও গোসলে বৃদ্ধি।
বুকের মধ্যে চাপবোধ, জ্বালা, খোচা মারা ব্যথা
মাথার তালু গরম , পা ঠাণ্ডা [ML Tyler]
রাতে পা জ্বলে; কাথার বাইরে রাখে।
সকাল ১১ টায় ক্ষুধা লাগে।
দিনের বেলায় ঘুম ঘুম ভাব কিন্তু রাতে অস্থির, ভয়ার্ত স্বপ্ন দেখে চমকে উঠে।
[২১]Tuberculinum bovinum kent
ফ্লুর সাথে কাশি ও প্রচণ্ড জয়েন্টের ব্যথা।
বিকালে জ্বরের তীব্রতা বাড়ে, আরো অসুস্থ হয়; রাতে ঘাম হয়।
জ্বরের সময় জয়েন্টে সুস্পষ্ট ব্যথা বিশেষ করে পায়ের জয়েন্টে ব্যথা হয়।
মৃদু, অবিরাম কাশি হয়, বুকে চেপে ধরে।
যেখানে সালফারও ব্যর্থ হয়, বংশে টিউবারকুলার দোষ থাকে, সেখানে এটি সফলতা নিয়ে আসে [ডা: ইসমাইল]
(পরবর্তী পোস্ট হবে নিউমিনোনিয়ার ওষুধ নিয়ে, ইন শা আল্লাহ)
-----------------------
#তথ্যসূত্রঃ
রজার মরিসনের Desktop Companion to Physical Pathology
থমাস ক্রুজেল, The Homeopathic Emergency Guide
এম এল টাইলার, Pointers to the Common Remedies

Saturday, March 21, 2020

করোনায় হোমিও -২

থেরাপিউটিকস - ২
----------
COVID-19 infection - 2
ফ্লু মহামারীতে হোমিওপ্যাথিক ওষুধের কার্যকারিতা বহুবার প্রমানিত হয়েছে। অতীত ইতিহাসে এটা বারবার প্রমানিত হয়েছে।
ভয়াবহ স্প্যানিস ফ্লু [1918 flu pandemic, deadly influenza pandemic.] এবং সফল হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা:
-----------------------------------------------
১৯১৮ -১৯ সালে সারা বিশ্বে স্প্যানিস ফ্লু ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল এবং ব্যাপক প্রাণহানী ঘটেছিল। পৃথিবীর এক তৃতীয়াংশ মানুষ (৫০০ মিলিয়ন/৫০ কোটি) এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল যাদের মধ্য থেকে কমপক্ষে ৫০ মিলিয়ন (৫ কোটি) মানুষ মারা যায়। [১] তবে এই সংখ্যা কম করে বলা হয়েছে, স্প্যানিস ফ্লুতে মৃত্যুর সংখ্যা ৫০ মিলিয়ন থেকে ১০০ মিলিয়ন (৫ থেকে ১০ কোটি) এর মধ্যে হবে। [২] অধিকাংশ রোগী নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।
সেই সময় হোমিওপ্যাথিক অনেক হাসপাতাল চালু ছিল। বহু হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক ব্যক্তিগতভাবেও স্প্যানিস ফ্লু চিকিৎসা করে ভাল করেছেনা। চিকিৎসকরা স্প্যানিস ফ্লুতে তাদের চিকিৎসিত রোগীর পরিসংখ্যান প্রকাশ করেন। তাতে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার ব্যাপক সফলতা লক্ষ্য করা যায়।
নিউইয়র্কের Dr. John Hutchinson ১৯২০ সালে একটি আর্টিক্যালে লেখেন। তাতে তিনি বলেন, “এই সত্য প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল যে হোমিওপ্যাথিক ওষুধ নিউমোনিয়া আরোগ্য করে, যেখানে ওষুধ সুস্পষ্টভাবে নির্দেশিত সেরকম প্রতিটি কেইস ভাল হয়। সে কারনে আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থায় মৃত্যুহার ছিল খুবই কম - এতই কম যে সেটা অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতিতে চিকিৎসিত রোগীর মৃত্যুহারের চেয়ে অনেক বেশি কম। মহামারী ইনফ্লুয়েঞ্জাতে হোমিওপ্যাথির অসাধারণ সাফল্য প্রত্যক্ষ করুন, সেটিই একমাত্র সাফল্য যেটি রেকর্ড তৈরি করেছে।” [৩]
হোমিওপ্যাথরা সে সময় প্রচুর রোগী দেখতেন। পিটসবার্গের Dr. W.F. Edmunson প্রাইভেট প্র্যাকটিসের সাথে হাসপাতালেও রোগী দেখতেন। তিনি কি পরিমান রোগী দেখেছেন তার সংখ্যা হিসেব করে রাখেন নি, সকাল সাড়ে আটটা বা নয়টা থেকে রোগী দেখা শুরু করতেন, রাতের ডিনার পর্যন্ত রোগী দেখতেন, রাতের খাবার খেয়ে হাসপাতালে ১০ টা পর্যন্ত থাকতেন, তারপর বাইরে গিয়ে রাত ১ টা পর্যন্ত রোগী দেখতেন।” [৪]
বাফেলোর Dr. Eli G. Jones বলেন যে তাকে এত বেশি রোগী দেখতে হয়েছে যে খাবার খাওয়ার সময় পেতেন না। [৫]
পিটসবার্গের Dr. John C. Calhoun লিখেছেন যে, এত বেশি রোগী দেখার ডাক জমা হতো যে সারাটা দিন ধরে সেগুলো দেখার যথেষ্ট সময় পাওয়া যেত না, তাই শর্টকাট উাপায়ে রোগী দেখতে হতো, কোন কোন দিন আমাকে প্রতিদিন ৭৫ থেকে ১০০ টা রোগী দেখতো হতো। প্রথম মহাযুদ্ধ ও বাড়ীর লোকের অসুস্থতার কারনে সে সময় আমাদের চিকিৎসকের অপ্রতুলতা ছিল। [৬]
নিউ ইয়র্ক, ট্রয়ের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ ক্রফোর্ড গ্রিন জানিয়েছেন যে বেশ কয়েক মাস ধরে প্রচুর পরিশ্রমের পরও ফলাফল একই রকম ছিল, "দুর্ভাগ্যক্রমে, আমি আমার নিজস্ব প্র্যাকটিস থেকে সঠিক পরিসংখ্যান উপস্থাপন করতে পারছি না। আমি জানি না কত শত ইনফ্লুয়েঞ্জার রোগী আমার হাতে চিকিৎসিত হয়েছে। আমার অনেক সহকর্মীর মতো আমার কেইসগুলোও গণনা করার সময় আমার কাছে ছিল না। 20 ই সেপ্টেম্বর, 1918, 12 ই মে, 1919 পর্যন্ত, এমন কোন দিন যায় নি যে ইনফ্লুয়েঞ্জার রোগী আমি দেখি নি। এমনও দিন গেছে যে ১৭ টার মতো ইনফ্লুয়েঞ্জার রোগী এক সাথে দেখতে হয়েছে। তবে আমি জানি না মোট কতজনকে পুরোপুরি চিকিত্সা করেছি। আসলে কতগুলো শিশু, কতগুলো বয়ষ্ক রোগী দেখেছি তার হিসেবও আমি রাখি নি।
তবে আমার চিকিৎসিত রোগীদের মধ্যে ২ টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এক, আট মাসে, অপুষ্টিতে ভুগছিল এবং তাকে ঠিকমতো খাওয়ানোর যাচ্ছিল না । এটি ছয় দিন বেঁচে ছিল। অন্যটি, বাইশ মাসের শিশু, খুব সংক্ষিপ্ত নিউমোনিয়াতে মারা যায়। আমি এই শিশুটিকে মাত্র দু'বার দেখেছিলাম। আশেপাশের পরিস্থিতি খারাপ ছিল এবং সন্তানের কোনও নার্সিং কেয়ার ছিল না। ” [৭]
United States Public Health Service (USPHS), এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রচলিত চিকিৎসায় এর মৃত্যুহার ছিল ৩০ শতাংশ। [৮]
Dr. Ralph Mellon, পাবলিক হেলথ ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ,New Enland Medical Gazette এর সম্পাদক, ১৯১৮ সালে ভয়াবহ ইনফ্লুয়েঞ্জা দেখা দেয়ার পর প্রচুর চিকিৎসিত রোগীর ডাটা সংগ্রহ করে (এলোপ্যাথিক ও হোমিওপ্যাথিক) তুলনা করে লিখেছেন -
“এ শহরে (রোচেস্টার, নিউইয়র্ক), এই ধারণা বেশ কিছু মহলে প্রচলিত হয়েছে যে ‘প্রচলিত চিকিৎসা’র চেয়ে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগী অনেক বেশি ভাল হয়। তিন জন9হোমিও চিকিৎসক দাবী করেছেন যে তারা ৩৭৫ জন উতকট ইনফ্লুয়েঞ্জার রোগী চিকিৎসা করেছেন, তাদের মধ্যে একজনও মারা যায় নি এবং তাদের মাঝে নিউমোনিয়া হওয়ার ঘটনা খুব ছিল।
একটি বিষয়ে বিতর্ক হতে পারে যে সেগুলো কি আসেলেই ফ্লুর রোগী ছিল নাকি সাধারণ ঠাণ্ডাকাশির রোগী ছিল। তবে এটা ধরে নেয়াই যুক্তিযুক্ত হবে যে একটি প্রবল মহামারীর সময় দেখা দেয়া এসব রোগীর অধিকাংশই ইনফ্লুয়েঞ্জা হিসেবেই ক্লিনিক্যালি চিহ্নিত হয়ে থাকে। একজন শীর্ষস্থানীয় এলোপ্যাথি চিকিৎসক জানিয়েছেন তার চিকিৎসিত রোগীর মৃত্যুহার ২৫ - ৪০ শতাংস।” [৯]
স্প্যানিস ফ্লুতে হোমিওপ্যাথরা ব্যাপক সাফল্য পান। তারা তাদের ব্যাপক সংখ্যক রোগী চিকিৎসার ফলাফল একত্রিত করার প্রচেষ্টা চালান। স্প্যানিস ফ্লুর দ্বিতীয় পর্যায় (১৯১৮ সালের শরৎকাল) এবং তৃতীয় পর্যায়ে (১৯১৯ সালের শীতকালে) আরো ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। সে সময় আমেরিকার হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকগণ
তাদের দ্বারা চিকিৎসিত রোগীর পরিসংখ্যানগত ফলাফল প্রকাশের জন্য বিভিন্ন সমীক্ষা চালান। ফিলাডেলফিয়ার ‘হানেমান মেডিক্যাল কলেজের’ ডিন Dr. William Pearson, আমেরিকান ইনস্টিটিউট অফ হোমিওপ্যাথির (AIH), এর সদস্য চিকিৎসকদের মাঝে করা একটি সমীক্ষা প্রকাশ করেন। ৮৮ জন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক ২৬,৭৯৫ জন রোগীর চিকিৎসা করেছেন, তার মধ্যে ২৭৩ জন মারা গেছেন। মৃত্যুহার ছিল ১.০২%। এদের মাঝে ২৪ জন চিকিৎসক ৩.৫১৯ জন রোগী চিকিৎসা করেছেন এবং কেউ মারা যায় নি।
হোমিওপ্যাথদের এই অবদান প্রকাশ করার উদ্দেশ্য হলো হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় মৃত্যুহার কেমন ছিল সেটার নির্ভরযোগ্য তথ্য উপস্থাপন।... মূল প্রতিবেদনটি ফাইল আকারে সংরক্ষণ করা আছে যাতে আগ্রহী কেউ পরিদর্শন করলে দেখতে পারবে। আমি দুঃখিত যে বেশ বড় সংখ্যখ হোমিওপ্যাথরা তাদের চিকিৎসিত রোগীর ফলাফল জানাতে পারেন নি, কারণ চিকিৎসকগণ হল দুর্বল সংবাদদাতা। তবে এটা স্পষ্ট দে উপরের তথ্যগুলো সমস্ত হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকদের চিকিৎসিত রোগীর ফলাফলের মোটামুটি প্রতিনিধিত্ব করে। প্রচলিত চিকিৎসায় মৃত্যুহার ছিল ৩০% (নিউমোনিয়ায় যারা আক্রান্ত হয়েছিল)। উভয় পদ্ধতির পরিসংখ্যান তুলনা করলে বুঝা যায় মহামারী ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগী চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা কত ভাল। যেহেতু সারা দেশে রিপোর্ট করা মৃত্যুর হারে হোমিওপ্যাথিক চিকিত্সকদের দ্বারা মৃত্যুর হার হ্রাস পেয়েছে, তাই সরকারী রেকর্ডগুলির সাথে তুলনা হোমিওপ্যাথিক চিকিত্সকদের সফলতার দিক আরো সুস্পষ্ট হয়ে উঠে। [১০]
-------
তথ্যসূত্র:
[১] https://www.cdc.gov/…/pandemic-reso…/1918-pandemic-h1n1.html
[২] https://www.wired.com/…/covid-19-is-nothing-like-the-spani…/
https://www.nytimes.com/…/opinion/coronavirus-1918-spanish-…
[৩] John Hutchinson. Prescrition factors. Discussion: Influenza: a favoable mortality and publicity. Journal of the American Institute of Homeopathy 1919-1920; 12: 807-813.
[৪] W. F. Edmunson. Discussion: Influenza: a favoable mortality and publicity. Journal of the American Institute of Homeopathy 1919-1920; 12: 598.
[৫]) Eli G. Jones. Some interesting facts. Homoeopathic Recorder 1919; 34: 11-15.
(৬) John C. Calhoun. A “flu” experience. Hahnemannian Monthly 1919; 54: 738-739.
(৭) Crawford R. Green. The treatment of Influenza in children. Journal of the American Institute of Homeopathy 1919-1920; 12: 1102-1112
[৮] Wade Hampton Frost. The epidemiology of influenza. Public Health Reports 1919; 34 (33): 1823-1836.
[9] Ralph R. Meelon. The influenza epidemic. New England Medical Gazette 1918; 53: 562-564.
[১০] William A. Pearson. Epidemic influenza treated by homeopahic physicians. Journal of the American Institute of Homeopathy 1919-1920; 12: 11-13.
[১১] Ernest F. Sappington. Discussion: Influenza: a favortable mortality and publicity. Journal of the American Institute of Homeopathy 1919-20; 12: 588.
[১২] H. A. Roberts. Discussion: Influenza: a favoable mortality and publicity. Journal of the American Institute of Homeopathy 1919-1920; 12: 591.
[১৩] Donald Macfarlan. Materia medica meeting. Homoeopathic Recorder 1920; 35; 262-265.
[১৪] W. A. Dewey. Homeopathy in influenza—A chorus of fity in harmony. Journal of the American Institute of Homeopathy 1920-21; 13: 1038-1043.
[১৫] L. A. Royal. Influenza and its results under homeopathic care in Central Iowa. Iowa Homeopathic Journal 1919-1920; 13: 194-198.
[credit to Dr. Andre Saine]

Thursday, March 19, 2020

করোনায় হোমিও -১

থেরাপিউটিকস -১
নতুন করোনা ভাইরাস সমাচার - ১
যখনই রোগটা কারো দেহে সংক্রমিত হয় তখনই তার দেহে কিছু উপসর্গ দেখা দেয়। সাধারণ ফ্লুতে যেসব লক্ষণ যেমন সর্দি, কাশি, জ্বর, শরীর ব্যথা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয়। উপসর্গ দেখা দিলেই তাদেরকে সম্ভাব্য COVID-19 এর রোগী মনে করা হয়। তাদেরকে তখন কোয়ারানটাইনে রাখা হয়, প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়, আসলে সার্স করোনা ভাইরাস-২ তে আক্রান্ত কিনা পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া যায়।
কিছু রোগী জটিলাকার ধারণ করে, তাদের নিউমোনিয়া দেখা দেয়। নিউমোনিয়াও মৃদু (mild), মধ্যম (moderate), মারত্মক ভাবে (severe) দেখা দিতে পারে। পরবর্তীতে তাদের অনেকের শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় - তাদেরকে একিউট রেসপাইরেটরি সিন্ড্রোমে আক্রান্ত রোগী বলা হয়।
রোগীর শ্বাসকষ্ট হতে থাকে, ফলে রক্তের মধ্যে অক্সিজেনের স্বল্পতা দেখা দেয়। ইনফেকশনের কারনে ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ব্লাড প্রেসার কমে যায়, হার্ট রেট বেড়ে যায়, শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হতে থাকে, অনেক সময় রোগী সেপ্টিক শকে চলে যায়। এটা খুবই ভয়াবহ অবস্থা, অনেকসময় রোগী আর চিকিৎসার পর্যায়ে থাকে না। ইনটেন্সিভ কেয়ারে থাকার পরও বিরাট সংখ্যক রোগী মারা যায়।
রোগীর প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলে অর্থাৎ তার লক্ষণ মৃদুভাবে থাকলে হাসপাতালে নেয়ার দরকার হয় না। সেসব রোগীকে আলো-বাতাসপূর্ণ একটা কক্ষে রাখতে হবে, এবং সে রুমে সেবাকাজে নিয়োজিত ব্যক্তি ছাড়া কেউ প্রবেশ করবে না। রোগী হাঁচি কাশি দেয়ার সময় অবশ্যই মাস্ক পড়ে থাকবে। যে সেবা করবে তাকেও প্রয়োজনীয় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে। রোগীর যদি শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় তবে তাকে বাড়িতে রেখে চিকিৎসা দেয়া যাবে না, তাদেরকে তখন হাসপাতালে নিতে হবে।
সাধারণ মানুষকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে যাতে তারা এ রোগ থেকে বেঁচে থাকতে পারে।
- সর্দিকাশিতে আক্রান্ত যেকোন মানুষ থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। কারন আপনি জানেন না সে নতুন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত কি না। সর্দিকাশিতে আক্রান্ত রোগীকে কম্পক্ষে ১৪ দিন পর্যবেক্ষনে রাখতে হবে।
- সাবান পানি দিয়ে হাত ধুয়ার অভ্যাস করতে হবে, অথবা এলকোহলযুক্ত হ্যান্ড রাব দিয়ে হাত মাখতে হবে।
- নাক, মুখ বা চোখে হাত দেয়া যাবে না। অবশ্যই হাত দেয়ার আগে হাত যথাযথ পরিস্কার করতে হবে।
রোগ সংক্রমণ রোধ করতে তিনটি বিষয় অবশ্যই করতে হবে -
- রোগীকে আইসোলেট করা,
- সন্দেহযুক্ত রোগীকে কোয়েরেন্টাইনে রাখা।
- এবং সুস্থ মানুষের মাঝে সচেতনতা বাড়িয়ে তাদেরকে অসুস্থ মানুষের সংস্পর্শ থেকে বাঁচিয়ে রাখার ব্যবস্থা করা।
---------
ভাইরাসজনিত রোগ নিয়ন্ত্রনে অতীতে হোমিওপ্যাথিক ওষুধ কার্যকারি ভূমিকা রেখেছে। ইতিহাসের পাতায় তার নজির বহু। দৈনন্দিন চিকিৎসা জীবনেও বহু ভাইরাসজনিত রোগী হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় দ্রুত আরোগ্য হতে দেখি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হলো সরকারী নীতি নির্ধারক মহলে আমাদের এই বার্তা আমরা পৌঁছাতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছি। তারপরও ভাল কিছুর করার স্বপ্ন দেখি, স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রচেষ্টা চালাই।
করোনা বিষয়ক হোমিওপ্যাথিক পরামর্শ জানতে আমাকে নক করতে পারেন।
Mohammad Mohshinuzzaman BHMS, (1st place)
01712079617