Wednesday, April 1, 2020

ইনফ্লুয়েঞ্জার হোমিও চিকিৎসা

ইনফ্লুয়েঞ্জার সবচেয়ে বড় জটিলতা হল নিউমোনিয়া। যারা মারা যায় তাদের অধিকাংশই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। তাই নিউমোনিয়ার চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে খুব ভাল জ্ঞান থাকতে হবে। এক্ষেত্রে প্রায়ই রোগীদের হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেয়া উচিত।
Dr. Borland তার বিখ্যাত নিউমোনিয়া বইয়ে নিউমোনিয়াকে চারটি পর্যায়ে ভাগ করে প্রত্যেকটি ভাগের জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ উল্লেখ করে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেছেন।
যেমন -
#১. Group-A: Incipient stage (প্রারম্ভিক স্তর): [নিউমোনিয়ার Congestion stage এর গ্রুপে পড়ে।] প্রথম ২৪ ঘন্টা হলো প্রারম্ভিক পর্যায়।
এই গ্রুপের জন্য ৪ টি ওষুধ প্রাই নির্দেশিত হয়। Aconite, Belladonna, Ferrum phos and Ipecac
#২. Group-B: Frankly developed pneumonia (যখন স্পষ্টভাবে নিউমোনিয়া প্রকাশিত): [Consolidation, Hepatization stage এই গ্রুপে পড়ে।] ২৪ ঘন্টা পর এই পর্যায় শুরু হয়।
এই গ্রুপের জন্য প্রায়ই চারটি ওষুধ নির্দেশিত হয়। Bryonia, Phosphorus, Veratrum viride, Chelidonium majus. নিউমোনিয়া যখন সাধারণভাবে দেখা দেয়, কোন জটিলতা হয় নাই, সাধারণভাবে চলমান Lobar pneumonia - তে এই চারটি ওষুধই সাধারণত নির্দেশিত হয়।
শীতকালে Phosphorus বেশি লাগে, সাধারণ তাপমাত্রায় Bryonia বেশি লাগে। এ দু’টি ওষুধই এ পর্যায়ে সারাবছর বেশি লাগে। বছরে কমসংখ্যক বা মহামারীতে বেশ কিছু রোগীতে Veratrum viride ব্যবহৃত হয়। Chelidonium কম ব্যবহৃত হয়। এগুলো শীতের চেয়ে সাধারণ আবহাওয়াতে বেশি নির্দেশিত হয়।
#৩. Group-C: Complicated pneumonias (জটিলতাপ্রাপ্ত নিউমোনিয়া):
এই গ্রুপের রোগীদের চিকিৎসা করতে খুব দক্ষতার প্রয়োজন। প্রায়ই একটি ওষুধে রোগী সুস্থ হয় না। প্রথম নির্বাচিত ওষুধ দেয়ার পর রোগী উন্নতি হয়, পরে লক্ষণের পরিবর্তন হয় তখন দেখা যায় ভিন্ন ওষুধ লাগে।
রোগীর জন্য সঠিক ওষুধ খুঁজে পাওয়াও বেশ কষ্টসাধ্য। আবার প্যাথলজির গভীরতা অনুযায়ী যথাযথা শক্তি নির্বাচন করতে হয়। নিম্ন শক্তিকে প্রায়ই প্রতিক্রিয়া হয় না, 1M শক্তি ভাল কাজ করে।
ক) মিশ্র সংক্রমন (Mixed Infection) + অত্যধিক অস্বাস্থ্যকর রোগী (Very unhealthy Patient): নিউমোনিয়া খুব জটিল পর্যায়ে চলে গিয়েছে, মিশ্র সংক্রমন (mixed infection), শারীরিক ভাবে খুবই নাজুক অবস্থায় আছে।
এই গ্রুপের জন্য বেশি ব্যবহৃত ওষুধের মধ্যে আছে, Baptisia tictoria, Pyrogenium, Lachesis mutus, Mercurius solubilis, Sulphur, Rhus toxcodendron.
জটিলতা প্রাপ্ত নিউমোনিয়ার রোগীর জন্য সঠিক ওষুধ নির্বাচন করা অনেক কঠিন। প্রায়ই রোগী একই ধরনের লক্ষণ প্রকাশ করে। যারা এলকোহল পান করেন তাদের জন্য Mercuirius, Lachesis ভাল কাজ করে। সেপ্টিক অবস্থায় Baptisia, Lachesis, Pyrogen বেশি নির্দেশিত হয়।
খ) মারাত্মক জটিলতা প্রাপ্ত নিউমোনিয়া (creeping type of pneumonia) বা বয়স্কদের ব্রঙ্কো-নিউমোনিয়া (Definite Broncho-pneumonia in adults): নিউমোনিয়া প্রথমে ফুসফুসের কোন একটি লোব আক্রান্ত করে (lobar pneumonia), পরবর্তিতে ফুসফুসের অন্যভাল অংশগুলো আক্রান্ত হতে থাকে। পূর্বের আক্রান্ত অংশ ঠিক না হয়ে ফুসফুসের বিভিন্ন অংশ আক্রান্ত করে অবস্থা আরো জটিল করে ফেলে।
এক্ষেত্রে উপরে বর্ণিত যেকোন ওষুধ লাগতে পারে। তবে চারটি ওষুধ এক্ষেত্রে ভাল কাজ করে। যেমন - Pulsatilla, Natrum sulph, Senega, Lobelia।
#8. Group-D: Late pneumonias (বিলম্বিত নিউমোনিয়া):
অনেক রোগী আমরা শুরুর দিকের পর্যায়ে/স্টেজে পাই না অথবা এমন রোগী পাই যেগুলোতে পুরোপুরি সুস্থ হচ্ছে না, বা রোগী তার আরোগ্য নিয়ে অসন্তুষ্ট। এসব রোগী চায় চূড়ান্তভাবে তাদের ফুসফুস নিউমোনিয়া মুক্ত হোক। এ ধরনের রোগীদের চিকিৎসার জন্য ৬ টি ওষুধ সম্পর্কে ভালভাবে জানা থাকতে হবে। এগুলো হল - Antim tart, Carbo veg, Kali carb, Arsenic, Lycopodium and Sulphur.
#উপসংহার:
উপরে উল্লেখিত ওষুধ গুলো নিয়ে আপনারা যদি কোন মহামারীর রোগী চিকিৎসা করতে নামেন, এবং সঠিকভাবে ওষুধগুলো ব্যবহার করতে পারেন তাহলে আপনার কাছে ১০০% রোগী ভাল হবে,
প্রচলিত চিকিৎসায় তাদের সর্বাধুনিক ওষুধ খেয়েও ২৩% রোগী মৃত্যু বরন করবে। [DM Borland]
#নিউমোনিয়ার রোগী চিকিৎসার ক্ষেত্রে ডাক্তারদের জন্য Dr. Roger Morrison এর কিছু নির্দেশনাবলী -
১. ভালভাবে পুর্ণাঙ্গ কেইস টেকিং করতে হবে।
২. যতক্ষণ না কোন ওষুধের চিত্র রোগীর মাঝে স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে ততক্ষণ পর্যন্ত ওষুধ দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কঠিন একুইট রোগীর মাঝেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ওষুধের সঠিক চিত্র পাওয়া যায়।
৩. শুধু জ্বর দেখেই ভয় পেয়ে তাড়াহুড়ো করে ওষুধ দিবেন না। মনে রাখবে অস্পষ্ট লক্ষণ ধরে ভুল ওষুধ প্রয়োগ করলে রোগীর লক্ষন আরোও অস্পষ্ট হয়ে যায়, ফলে পরবর্তীতে সঠিক ওষুধ নির্বাচন করতে বেগ পেতে হয়।
৪. এসব রোগীতে প্রায়ই উচ্চ শক্তির প্রয়োজন হয়। ১ হাজার শক্তি কোন ক্ষেত্রে ১০ হাজার শক্তি প্রয়োজনে প্রতিদিন কয়েকবার ব্যবহার করার প্রয়োজন হতে পারে।
৫. সিরিয়াস রোগীগুলোর প্রতিদিন ফলো-আপ করা প্রয়োজন। প্রতিটি লক্ষণ আবার নতুন করে খোঁজ নিতে হবে।
৬. নিউমোনিয়ার রোগী প্রায়ই একাধিক ওষুধ লাগে। কারন প্রথম নির্বাচিত ওষুধ প্রয়োগের পর রোগীর মাঝের লক্ষণের পরিবর্তন হয়, সেজন্য পরবর্তী অন্য ওষুধ নির্দেশিত হয়। রোগীর সম্পূর্ণ আরোগ্যের জন্য তাই কয়েকটি ওষুধ প্রয়োগ করার দরকার হয়। নতুন লক্ষণ দেখা দিলে সে লক্ষণ অনুযায়ী ওষুধ প্রয়োগ করুন, এবং অনেক সময়ই পরবর্তীতে অনুপূরক ওষুধ লাগে।
৭. অনেক ক্ষেত্রেই রোগীর জন্য কনস্টিটিউশনাল/ধাতুগত ওষুধ লাগে। যদি কোন রোগী আগে থেকেই ধাতুগত ওষুধ সেবন করতে থাকে সেক্ষেত্রে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হলে যদি তার নিউমোনিয়াযুক্ত লক্ষণাবলী আংশিকভাবে কভার করে তবে উক্ত ধাতুগত ওষুধই পুন:প্রয়োগ করতে হবে এবং এটাই তার জন্য সবচেয়ে ভাল করবে।
৮. প্রথাগতভাবে (traditionally) বহু হোমিওপ্যাথ নিউমোনিয়াকে বিভিন্ন ধাপে ভাগ করে [inflammatory, Consolidation/hepatization, Recovering phase] ওষুধের আলোচনা করেছেন। এই ধাপগুলো ওষুধের পার্থক্যকরনে সাহায্য করে তবে যেকোন ওষুধ যেকোন ধাপে নির্দেশিত হতে পারে।
চলবে..........
-------------------
Mohammad Mohshinuzzaman BHMS (1st place), PGD
01712079617