Saturday, March 21, 2020

করোনায় হোমিও -২

থেরাপিউটিকস - ২
----------
COVID-19 infection - 2
ফ্লু মহামারীতে হোমিওপ্যাথিক ওষুধের কার্যকারিতা বহুবার প্রমানিত হয়েছে। অতীত ইতিহাসে এটা বারবার প্রমানিত হয়েছে।
ভয়াবহ স্প্যানিস ফ্লু [1918 flu pandemic, deadly influenza pandemic.] এবং সফল হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা:
-----------------------------------------------
১৯১৮ -১৯ সালে সারা বিশ্বে স্প্যানিস ফ্লু ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল এবং ব্যাপক প্রাণহানী ঘটেছিল। পৃথিবীর এক তৃতীয়াংশ মানুষ (৫০০ মিলিয়ন/৫০ কোটি) এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল যাদের মধ্য থেকে কমপক্ষে ৫০ মিলিয়ন (৫ কোটি) মানুষ মারা যায়। [১] তবে এই সংখ্যা কম করে বলা হয়েছে, স্প্যানিস ফ্লুতে মৃত্যুর সংখ্যা ৫০ মিলিয়ন থেকে ১০০ মিলিয়ন (৫ থেকে ১০ কোটি) এর মধ্যে হবে। [২] অধিকাংশ রোগী নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।
সেই সময় হোমিওপ্যাথিক অনেক হাসপাতাল চালু ছিল। বহু হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক ব্যক্তিগতভাবেও স্প্যানিস ফ্লু চিকিৎসা করে ভাল করেছেনা। চিকিৎসকরা স্প্যানিস ফ্লুতে তাদের চিকিৎসিত রোগীর পরিসংখ্যান প্রকাশ করেন। তাতে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার ব্যাপক সফলতা লক্ষ্য করা যায়।
নিউইয়র্কের Dr. John Hutchinson ১৯২০ সালে একটি আর্টিক্যালে লেখেন। তাতে তিনি বলেন, “এই সত্য প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল যে হোমিওপ্যাথিক ওষুধ নিউমোনিয়া আরোগ্য করে, যেখানে ওষুধ সুস্পষ্টভাবে নির্দেশিত সেরকম প্রতিটি কেইস ভাল হয়। সে কারনে আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থায় মৃত্যুহার ছিল খুবই কম - এতই কম যে সেটা অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতিতে চিকিৎসিত রোগীর মৃত্যুহারের চেয়ে অনেক বেশি কম। মহামারী ইনফ্লুয়েঞ্জাতে হোমিওপ্যাথির অসাধারণ সাফল্য প্রত্যক্ষ করুন, সেটিই একমাত্র সাফল্য যেটি রেকর্ড তৈরি করেছে।” [৩]
হোমিওপ্যাথরা সে সময় প্রচুর রোগী দেখতেন। পিটসবার্গের Dr. W.F. Edmunson প্রাইভেট প্র্যাকটিসের সাথে হাসপাতালেও রোগী দেখতেন। তিনি কি পরিমান রোগী দেখেছেন তার সংখ্যা হিসেব করে রাখেন নি, সকাল সাড়ে আটটা বা নয়টা থেকে রোগী দেখা শুরু করতেন, রাতের ডিনার পর্যন্ত রোগী দেখতেন, রাতের খাবার খেয়ে হাসপাতালে ১০ টা পর্যন্ত থাকতেন, তারপর বাইরে গিয়ে রাত ১ টা পর্যন্ত রোগী দেখতেন।” [৪]
বাফেলোর Dr. Eli G. Jones বলেন যে তাকে এত বেশি রোগী দেখতে হয়েছে যে খাবার খাওয়ার সময় পেতেন না। [৫]
পিটসবার্গের Dr. John C. Calhoun লিখেছেন যে, এত বেশি রোগী দেখার ডাক জমা হতো যে সারাটা দিন ধরে সেগুলো দেখার যথেষ্ট সময় পাওয়া যেত না, তাই শর্টকাট উাপায়ে রোগী দেখতে হতো, কোন কোন দিন আমাকে প্রতিদিন ৭৫ থেকে ১০০ টা রোগী দেখতো হতো। প্রথম মহাযুদ্ধ ও বাড়ীর লোকের অসুস্থতার কারনে সে সময় আমাদের চিকিৎসকের অপ্রতুলতা ছিল। [৬]
নিউ ইয়র্ক, ট্রয়ের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ ক্রফোর্ড গ্রিন জানিয়েছেন যে বেশ কয়েক মাস ধরে প্রচুর পরিশ্রমের পরও ফলাফল একই রকম ছিল, "দুর্ভাগ্যক্রমে, আমি আমার নিজস্ব প্র্যাকটিস থেকে সঠিক পরিসংখ্যান উপস্থাপন করতে পারছি না। আমি জানি না কত শত ইনফ্লুয়েঞ্জার রোগী আমার হাতে চিকিৎসিত হয়েছে। আমার অনেক সহকর্মীর মতো আমার কেইসগুলোও গণনা করার সময় আমার কাছে ছিল না। 20 ই সেপ্টেম্বর, 1918, 12 ই মে, 1919 পর্যন্ত, এমন কোন দিন যায় নি যে ইনফ্লুয়েঞ্জার রোগী আমি দেখি নি। এমনও দিন গেছে যে ১৭ টার মতো ইনফ্লুয়েঞ্জার রোগী এক সাথে দেখতে হয়েছে। তবে আমি জানি না মোট কতজনকে পুরোপুরি চিকিত্সা করেছি। আসলে কতগুলো শিশু, কতগুলো বয়ষ্ক রোগী দেখেছি তার হিসেবও আমি রাখি নি।
তবে আমার চিকিৎসিত রোগীদের মধ্যে ২ টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এক, আট মাসে, অপুষ্টিতে ভুগছিল এবং তাকে ঠিকমতো খাওয়ানোর যাচ্ছিল না । এটি ছয় দিন বেঁচে ছিল। অন্যটি, বাইশ মাসের শিশু, খুব সংক্ষিপ্ত নিউমোনিয়াতে মারা যায়। আমি এই শিশুটিকে মাত্র দু'বার দেখেছিলাম। আশেপাশের পরিস্থিতি খারাপ ছিল এবং সন্তানের কোনও নার্সিং কেয়ার ছিল না। ” [৭]
United States Public Health Service (USPHS), এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রচলিত চিকিৎসায় এর মৃত্যুহার ছিল ৩০ শতাংশ। [৮]
Dr. Ralph Mellon, পাবলিক হেলথ ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ,New Enland Medical Gazette এর সম্পাদক, ১৯১৮ সালে ভয়াবহ ইনফ্লুয়েঞ্জা দেখা দেয়ার পর প্রচুর চিকিৎসিত রোগীর ডাটা সংগ্রহ করে (এলোপ্যাথিক ও হোমিওপ্যাথিক) তুলনা করে লিখেছেন -
“এ শহরে (রোচেস্টার, নিউইয়র্ক), এই ধারণা বেশ কিছু মহলে প্রচলিত হয়েছে যে ‘প্রচলিত চিকিৎসা’র চেয়ে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগী অনেক বেশি ভাল হয়। তিন জন9হোমিও চিকিৎসক দাবী করেছেন যে তারা ৩৭৫ জন উতকট ইনফ্লুয়েঞ্জার রোগী চিকিৎসা করেছেন, তাদের মধ্যে একজনও মারা যায় নি এবং তাদের মাঝে নিউমোনিয়া হওয়ার ঘটনা খুব ছিল।
একটি বিষয়ে বিতর্ক হতে পারে যে সেগুলো কি আসেলেই ফ্লুর রোগী ছিল নাকি সাধারণ ঠাণ্ডাকাশির রোগী ছিল। তবে এটা ধরে নেয়াই যুক্তিযুক্ত হবে যে একটি প্রবল মহামারীর সময় দেখা দেয়া এসব রোগীর অধিকাংশই ইনফ্লুয়েঞ্জা হিসেবেই ক্লিনিক্যালি চিহ্নিত হয়ে থাকে। একজন শীর্ষস্থানীয় এলোপ্যাথি চিকিৎসক জানিয়েছেন তার চিকিৎসিত রোগীর মৃত্যুহার ২৫ - ৪০ শতাংস।” [৯]
স্প্যানিস ফ্লুতে হোমিওপ্যাথরা ব্যাপক সাফল্য পান। তারা তাদের ব্যাপক সংখ্যক রোগী চিকিৎসার ফলাফল একত্রিত করার প্রচেষ্টা চালান। স্প্যানিস ফ্লুর দ্বিতীয় পর্যায় (১৯১৮ সালের শরৎকাল) এবং তৃতীয় পর্যায়ে (১৯১৯ সালের শীতকালে) আরো ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। সে সময় আমেরিকার হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকগণ
তাদের দ্বারা চিকিৎসিত রোগীর পরিসংখ্যানগত ফলাফল প্রকাশের জন্য বিভিন্ন সমীক্ষা চালান। ফিলাডেলফিয়ার ‘হানেমান মেডিক্যাল কলেজের’ ডিন Dr. William Pearson, আমেরিকান ইনস্টিটিউট অফ হোমিওপ্যাথির (AIH), এর সদস্য চিকিৎসকদের মাঝে করা একটি সমীক্ষা প্রকাশ করেন। ৮৮ জন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক ২৬,৭৯৫ জন রোগীর চিকিৎসা করেছেন, তার মধ্যে ২৭৩ জন মারা গেছেন। মৃত্যুহার ছিল ১.০২%। এদের মাঝে ২৪ জন চিকিৎসক ৩.৫১৯ জন রোগী চিকিৎসা করেছেন এবং কেউ মারা যায় নি।
হোমিওপ্যাথদের এই অবদান প্রকাশ করার উদ্দেশ্য হলো হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় মৃত্যুহার কেমন ছিল সেটার নির্ভরযোগ্য তথ্য উপস্থাপন।... মূল প্রতিবেদনটি ফাইল আকারে সংরক্ষণ করা আছে যাতে আগ্রহী কেউ পরিদর্শন করলে দেখতে পারবে। আমি দুঃখিত যে বেশ বড় সংখ্যখ হোমিওপ্যাথরা তাদের চিকিৎসিত রোগীর ফলাফল জানাতে পারেন নি, কারণ চিকিৎসকগণ হল দুর্বল সংবাদদাতা। তবে এটা স্পষ্ট দে উপরের তথ্যগুলো সমস্ত হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকদের চিকিৎসিত রোগীর ফলাফলের মোটামুটি প্রতিনিধিত্ব করে। প্রচলিত চিকিৎসায় মৃত্যুহার ছিল ৩০% (নিউমোনিয়ায় যারা আক্রান্ত হয়েছিল)। উভয় পদ্ধতির পরিসংখ্যান তুলনা করলে বুঝা যায় মহামারী ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগী চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা কত ভাল। যেহেতু সারা দেশে রিপোর্ট করা মৃত্যুর হারে হোমিওপ্যাথিক চিকিত্সকদের দ্বারা মৃত্যুর হার হ্রাস পেয়েছে, তাই সরকারী রেকর্ডগুলির সাথে তুলনা হোমিওপ্যাথিক চিকিত্সকদের সফলতার দিক আরো সুস্পষ্ট হয়ে উঠে। [১০]
-------
তথ্যসূত্র:
[১] https://www.cdc.gov/…/pandemic-reso…/1918-pandemic-h1n1.html
[২] https://www.wired.com/…/covid-19-is-nothing-like-the-spani…/
https://www.nytimes.com/…/opinion/coronavirus-1918-spanish-…
[৩] John Hutchinson. Prescrition factors. Discussion: Influenza: a favoable mortality and publicity. Journal of the American Institute of Homeopathy 1919-1920; 12: 807-813.
[৪] W. F. Edmunson. Discussion: Influenza: a favoable mortality and publicity. Journal of the American Institute of Homeopathy 1919-1920; 12: 598.
[৫]) Eli G. Jones. Some interesting facts. Homoeopathic Recorder 1919; 34: 11-15.
(৬) John C. Calhoun. A “flu” experience. Hahnemannian Monthly 1919; 54: 738-739.
(৭) Crawford R. Green. The treatment of Influenza in children. Journal of the American Institute of Homeopathy 1919-1920; 12: 1102-1112
[৮] Wade Hampton Frost. The epidemiology of influenza. Public Health Reports 1919; 34 (33): 1823-1836.
[9] Ralph R. Meelon. The influenza epidemic. New England Medical Gazette 1918; 53: 562-564.
[১০] William A. Pearson. Epidemic influenza treated by homeopahic physicians. Journal of the American Institute of Homeopathy 1919-1920; 12: 11-13.
[১১] Ernest F. Sappington. Discussion: Influenza: a favortable mortality and publicity. Journal of the American Institute of Homeopathy 1919-20; 12: 588.
[১২] H. A. Roberts. Discussion: Influenza: a favoable mortality and publicity. Journal of the American Institute of Homeopathy 1919-1920; 12: 591.
[১৩] Donald Macfarlan. Materia medica meeting. Homoeopathic Recorder 1920; 35; 262-265.
[১৪] W. A. Dewey. Homeopathy in influenza—A chorus of fity in harmony. Journal of the American Institute of Homeopathy 1920-21; 13: 1038-1043.
[১৫] L. A. Royal. Influenza and its results under homeopathic care in Central Iowa. Iowa Homeopathic Journal 1919-1920; 13: 194-198.
[credit to Dr. Andre Saine]

No comments: