Saturday, March 28, 2020

ইনফ্লুয়েঞ্জা- হোমিও চিকিৎসা

থেরাপিউটিকস - ৬
----------
বিশ্বব্যাপি সংক্রামক রোগে মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগ। বিশেষ করে বয়ষ্ক মানুষ এবং যারা অন্যান্য শ্বাসযন্ত্রের রোগ, হাইপ্রেসার, ডায়াবেটিস, হৃদরোগে ভোগে শারীরিকভাবে দুর্বল তাদের জন্য ইনফ্লুয়েঞ্জা ভয়াবহ রূপ ধারণ করে।
বর্তমানে COVID-19 রোগটিও ইনফ্লুয়েঞ্জা। ইনফ্লুয়েঞ্জার জটিলতায় নিউমোনিয়া দেখা দেয় এবং মৃত্যুর কারণ হয়। প্রচলিত চিকিৎসায় ভ্যাক্সিন দিয়ে এটি প্রতিরোধ করার চেষ্টা করা হয় কিন্তু সেটার কার্যকারিতা অনেক ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হয়। কারণ এই ভাইরাসটি প্রতিনিয়ত তার চেহেরা পরিবর্তন করে (mutation)। এসব ভ্যাক্সিনের লং টার্ম খারাপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে। সঠিক ওষুধ নির্বাচন করতে পারলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে রোগী ভাল হয়, জটিলতার দিকে যায় না।
হোমিওপ্যাথিকও ওষুধ লক্ষণ সাদৃশ্যে প্রয়োগ করতে হয়, রুটিনমাফিক কোন নির্দিষ্ট ওষুধ প্রয়োগ করা থেকে বিরত থাকুন। রোগের শুরুতে অনেকে একোনাইট বা কোন স্পেসিফিক ওষুধ প্রয়োগ করলে রোগীর লক্ষণ অস্পষ্ট হয়ে যায়, তখন সঠিক ধারায় চিকিৎসা না হওয়ায় রোগ জটিল আকার ধারণ করতে পারে। তাই প্রয়োজনে ওষুধ নির্বাচনের ক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো না করে সঠিক চিত্র পেতে অপেক্ষা করুন। কোন ওষুধ প্রয়োগ করার পর উন্নতি দেখা দিলে ওষুধ বন্ধ রেখে অপেক্ষা করুন (নিউ পটেন্সির ক্ষেত্রে ওষুধ চালিয়ে যাবেন যদি শেষে আবার বৃদ্ধি দেখা দেয় তখন ওষুধ বন্ধ করে দিবেন)। সঠিক ওষুধ প্রয়োগের স্বল্প সময়ের মধ্যেই উন্নতি লক্ষ করা যায়। ২৪ ঘন্টার পরও যদি উন্নতি না হয় তাহলে মনে করবেন ওষুধ সুনির্বাচিত হয় নি। সেক্ষেত্রে কেইস হিস্টরি নতুন করে নিবেন। আবার কোন ওষুধ প্রয়োগের পর যদি দেখেন রোগ লক্ষণ কমে গিয়েছিল আবার দেখা দিচ্ছে সেক্ষেত্রে ওষুধের শক্তি বৃদ্ধি করবেন। অনেকসময় প্রয়োগকৃত ওষুধের অনুপূরক/complementary কোন ওষুধ লাগতে পারে।
সাধারণত ৩০ শক্তি দিনে ৩ থেকে ৪ বার ব্যবহার করা যায়। ওষুধ পানিতে মিশিয়ে শক্তি পরিবর্তন রীতিতে প্রয়োগ করতে হবে। নিউ পটেন্সির ক্ষেত্রে ০/১ বা ০/২ থেকে শুরু করবেন।
আজকে আমরা #ইনফ্লুয়েঞ্জাতে বেশি ব্যবহৃত হয় এমন কিছু ওষুধ নিয়ে আলোচনা করবো।
[১] Arsenicum album:
- ইনফ্লুয়েঞ্জার সাথে পাকস্থলি-অন্ত্রের প্রদাহ থাকে, বমি ও পাতলা পায়খানা হয়।
- জ্বর: উচ্চ জ্বর হয় (১০২ - ১০৪ ডিগ্রি), ইনফ্লুয়েঞ্জার শুরুর লক্ষনের ২/৩ পরেই উচ্চ জ্বর শুরু হয়।
- মুখমণ্ডল গরম, খোলা বাতাস চায় যদিও শরীরে শীত লাগে। বৃদ্ধি: মধ্যরাতে বা রাত ১ টার দিকে বৃদ্ধি, দুপুর, ১ টার দিকে বৃদ্ধি
- জ্বরের পর কাঁপুনি ও শীত করতে থাকে।
- শীত: অত্যধিক শীত করে, শীতে শরীর কাঁপতে থাকে। বৃদ্ধি: পানি পান বা খাবার পর, পায়খানা করার আগে, সঞ্চালনে, পরিশ্রমে।
- সার্বদৈহিক: রোগী অল্প অল্প করে বারবার পানি পান করে। জিহ্বায় পাতলা সাদা প্রলেপ থাকে। সুস্পষ্ট অস্থিরতা, মাঝে মাঝে রোগী অত্যধিক দুর্বল হয়ে কোলাপস অবস্থা দেখা দিতে পারে।
- মানসিক: খুব বেশি উদ্বিগ্ন। মনে করে সে এ অবস্থা থেকে আর ভাল হবে না, মারা যাবে। তাই সবসময় পাশে কাউকে চায়।
[২] Bryonia alba:
- ধীরে ধীরে রোগের বিকাশ লাভ করে। সাথে শরীরে খুব ব্যথা হয় (চাবায়/কামড়ায়)।
- জ্বর: জ্বরের উত্তাপের সাথে শরীরে বেশ ঘাম হয়।
- শীত: রাগের পর শীত দেখা দিতে পারে। হাত ও পায়ের আঙ্গুলের মাথা থেকে শীত শুরু হয় বা কখনও ঠোট থেকেও শীতভাব শুরু হতে পারে। শরীরের ডান পাশে শীত করে।
- সার্বদৈহিক: সাধারণত গরম কাতর, গরম কক্ষ অপছন্দ। প্রচুর পিপাসা, অনেকক্ষন পরপর একসাথে অনেক পরিমানে পানি পান করে। রাত ৯ টার দিকে তার লক্ষণ বাড়ে।
- বৃদ্ধি: সমান্য নড়াচড়াতেও রোগ বাড়ে। ঝাঁকিতে বাড়ে।
- অস্থিরতা অনুভব করে কিন্তু সামন্য নাড়াচাড়াতেও সমস্যা বেড়ে যায় (মাথাব্যথা ছাড়া)
- স্থানিক লক্ষণঃ মাথার পিছনভাগে বা মাথার সামনের বাম দিকে প্রচণ্ড মাথাব্যথা হয়।
- জিহ্বাঃ সাদা বা ময়লাটে বাদামী রঙের প্রলেপযুক্ত, বিশেষ জিহ্বার মধ্যখানে।
- জ্বালাকর সর্দিস্রাব।
- বুক ও পিঠ ব্যথা।
- মানসিক: খিটখিটে স্বভাব, স্থূলবুদ্ধি (dull), কথার উত্তর দিতে চায় না।
- বাড়ী যেতে চায়। প্রলাপের সময় বাড়ী নিয়ে যেতে বলে, ব্যবসা বিষয়ক কথা বলে। অর্থনৈতিক চাপে থাকার কারনে লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে।
[৩] Eupatorium perfoliatum:
উচ্চ জ্বরের সাথে ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং সাংঘাতিক শরীর ব্যথা। রোগী ব্যথা সহ্য করতে পারে না।
জ্বর: উচ্চ জ্বর, সাধারণত ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইটের উপরে।
শীত: সকাল ৯ টার দিকে শীত লাগা শুরু হয়। কোমর থেকে শুরু হয়।
অত্যধিক শীত, শীতে শরীর কাঁপতে থাকে। পানি পানের পর বাড়ে।
সার্বদৈহিক: শীতকাতর এবং ঠাণ্ডা বাতাস সহ্য হয় না।
পিপাসা: ঠাণ্ডা পানির পিপাসা (শীত লাগে এবং এমনি শীতের সময়ও ঠাণ্ডা পানি পান করতে চায়।)
শীত লাগার আগে পিপাসা লাগে।
ঠাণ্ডা খাবার ও আইস ক্রিম খেতে চায়।
ঘাম তেমন হয় না।
মাংস এবং বিশেষ করে হাড়ে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। রোগী মনে করে ব্যথায় হাড় ভেঙে যাবে।
স্থানীয় লক্ষণ: জ্বরে তীব্রতার সময় প্রচণ্ড মাথাব্যথা করে।
মাথা খুব ভারী লাগে, মাথা ব্যথা হয়, হাত দিয়ে মাথা বালিশ থেকে ওঠাতে হয়।
ইনফ্লুয়েঞ্জাতে নাক থেকে প্রচুর পরিমানে পানির মতো সর্দিস্রাব হয়।
বমিভাব ও বমি; সঞ্চালনে বাড়ে, শীত লাগা শুরু হবার আগে বাড়ে।
উত্তাপ ও শীতাবস্থার মাঝে পিত্তবমি হয়।
প্রচণ্ড যন্ত্রনাপূর্ণ কোমর ব্যথা দেখা দেয়।
মানসিক: ব্যথায় মরিয়া হয়ে উঠে, গোঙায়।
[৪] Belladonna:
ইনফ্লুয়েঞ্জা খুব দ্রুততার সাথে শুরু হয় এবং ভীতিজনক উচ্চ জ্বর থাকে।
জ্বর: জ্বর প্রায়ই ১০৫ ডিগ্রী ফা. পর্যন্ত উঠে।
বিকাল ৩ টায় বাড়ে, প্রলাপ বকে।
শীত: বাহু বা হাত থেকে শীত শুরু হয়।
সার্বদৈহিক: মুখমণ্ডল লাল হয়ে যায়, চোখের তারা প্রসারিত থাকে, চোখ চকচক করে।
বৃদ্ধি: ঝাঁকি, সঞ্চালনে।
হাত-পা বরফের মথো ঠাণ্ডা থাকে কিন্তু মুখমণ্ডল ও শরীর গরম থাকে।
পিপাসাহীন। লেবু ও লেবুস্বাদযুক্ত পানীয় পান করতে চায়।
স্থানীক লক্ষণঃ প্রায় প্রচণ্ড মাথাব্যথা থাকে, দপদপানি ব্যথা, পালস খুব জোরে হয়।
ডানপাশে মাথাব্যথা, চোখ ও গলাব্যথা।
মানসিকঃ খুব দ্রুত রোগীর মাঝে প্রলাপ দেখা দেয় অথবা দৃষ্টিভ্রম (hallucination) হয়।
[৫] Gelsemium sempervirens:
অত্যধিক দুর্বলতা ও নিদ্রালুতার সাথে ইনফ্লুয়েঞ্জা দেখা দেয়।
জ্বর: ধীরে, মন্থর গতিতে জ্বর দেখা দেয় – ১ থেকে ৩ দিনে বিকাশ লাভ করে।
শীত: পিঠে শীত অনুভব করে, পিঠ দিয়ে শীত উপরে নিচে উঠানামা করে।
একবার শীত পরক্ষনই গরমের উচ্ছাস। শীত ও উত্তাপ পর্যায়ক্রমে দেখা দেয়।
শীতে সুক্ষভাবে কাঁপুনি হয়।
সার্বদৈহিকঃ সকাল ১০টায় বৃদ্ধি
পিপাসা কম
খুব দুর্বলতা, দুর্বলতার কারনে কাপে, হাত-পা ভারী লাগে, চোখের পাতা এবং মাথায় ভারীবোধ।
সার্বিকভাবে ঘুমঘুম ভাব।
স্থানীয় লক্ষণঃ মাথাব্যথা, মাথার পিছনভাগে শুরু হয়ে কপালে বিস্তৃত হয়।
চোখের পাতা খোলে রাখতে পারে না, বা অর্ধেক খোলা থাকে।
রঞ্জিত মুখমণ্ডল, কালচে লাল বর্ণের। (dusky red)
জিহ্বা: হলদে প্রলেপযুক্ত
মানসিক: নিস্তেজতা, মানসিক স্থূলতা (dull), কুয়াশাচ্ছন্ন।
[৬] Pyrogenium:
উচ্চ জ্বরের সাথে (103° F) ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং শরীর ব্যথা।
জ্বর: উচ্চ জ্বর যেটি দ্রুত পরিবর্তিত হয়।
শীত: পিঠের দুই অংসফলক (scapulae) মাঝখান থেকে শীত লাগা শুরু হয়।
শীত শরীরে অনেক ভিতরে অনুভব হয় অথবা হাড়ের মধ্যে শীত লাগে।
সার্বদৈহিক: বেদনা/টাটানি ব্যথা (sorness); এমন কি বিছানা খুব শক্ত লাগে।
ঠাণ্ডায় বৃদ্ধি, গরমে, গরম স্নানে, সঞ্চালনে উপশম।
জ্বরের সময় খুব বেশি অস্থিরতা প্রকাশ পায়।
জ্বরের তাপমাত্রার সাথে নাড়ীর সামাঞ্জস্যতা থাকে না অর্থাৎ সামান্য জ্বরে অস্বাভাবিক দ্রুত নাড়ী (১৪০/মিনিট) বা উল্টোটা হতে পারে।
ঘাম বা স্রাবে দুর্গন্ধ।
স্থানীয় লক্ষণঃ মাংসপেশির ব্যথা, সঞ্চালনে উপশম
হৃদযন্ত্র নিয়ে অস্বাভাবিক সচেতনতা (abnormal consciousness of the heart)
মানসিক: মনে করে সে ছিন্নভিন্ন হয়ে আছে বা দ্বিগুণ (double) [Baptisia]
[৭] Baptisia tinctoria:
ইনফ্লুয়েঞ্জা দ্রুত অগ্রসর হয়, অবসন্ন হয়ে পড়ে, বুদ্ধিজড়তা দেখা দেয়, চেহেরা কালচে লাল হয়ে যায়।
অগ্রসর/advanced ইনফ্লুয়েঞ্জা, সাথে মানসিক খর্বতা/স্থূলবুদ্ধিতা, এমন কি সংজ্ঞাহীনতা (stupor)
কথা বলার মাঝে ঘুমিয়ে পড়ে।
গলা ও জিহ্বা শুষ্ক এবং প্রলেপযুক্ত; পুঁজ হয় এবং প্রচণ্ড দুর্গন্ধযুক্ত যদিও কোন ব্যথা থাকে না।
সেপ্টিক অবস্থা। মনে করে বিছানায় দেহ ছিন্ন ভিন্ন হয়ে আছে বা নিজেকে দুই জন মনে করে।
“পাকস্থলির ফ্লু” – দুর্গন্ধ উদরাময় এবং উদগার হয়।
ইনফ্লুয়েঞ্জার পর মাস্টয়েড হাড়ের প্রদাহ (mastoiditis)
শরীর টাটানি ব্যথা/চাবানি ব্যথা, বিছানা শক্ত অনুভব করে, মোটেই আরাম পায় না।
শুধু তরল খাবার খেতে পারে, শক্ত খাবার খেতে গেলে উল্টে আসে, বমি হয়ে যায়।
বৃদ্ধি: আদ্র গরমে, কুয়াশা, কক্ষের মধ্যে বৃদ্ধি। চাপে বৃদ্ধি, ব্যথার কথা চিন্তা করলে বাড়ে।
[৮] Nux vomica:
সকল ধরনের উদ্দীপনার (আলো, শব্দ, গন্ধ) প্রতি সংবেদনশীল।
জ্বর: উচ্চ জ্বর, দ্রুত বাড়ে – প্রথম দিন খুব জ্বর উঠে।
মুখমণ্ডল জ্বলে, মুখে খুব তাপ কিন্তু তারপরও মুখ ঢেকে রাখে।
শীত: মারাত্মক শীত, প্রচণ্ড শীতে কাপতে থাকে।
অনাবৃত হলেই শীত লাগে বা রোগী আবরনের নিচে নাড়াচাড়া সময় বাতাসের সামন্য সঞ্চালনেই শীত লাগে।
সার্বদৈহিক: সার্বিকভাবে শীতকাতর এবং উত্তাপে কমে।
আলো, শব্দ, গন্ধ সহ্য করতে পারে না, এমন কি তার ত্বক খুব সংবেদনশীল হয়ে পড়ে।
গরম খাবার ও পানীয় পান করতে চায়।
স্থানীক লক্ষণঃ তীব্র মাথাব্যথা। গলাব্যথা, গলার ভিতরে যেন ছুলে গেছে।
বমিবমি ভাব, বমি করার পর বমিভাব একদম থাকে না।
শরীরের ব্যথা গরম প্রয়োগে কমে।
মানসিক: আতি উত্তেজনাপ্রবণ ও সংবেদনশীল রোগী। খুব খিটেখিটে স্বভাবের হয়। মাথা থেকে কাজের চিন্তা বাদ দিতে পারে না; ঘুম হয় না।
[৯] Rhus toxicodendron
ইনফ্লুয়েঞ্জা সাথে নিদারুন যন্ত্রনা, শরীর ব্যথা এবং অস্থিরতা।
জ্বর: মধ্যম মাত্রা থেকে উচ্চ জ্বর, প্রায় শরীর কোন কারনে ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া থেকে শুরু হয়।
শীত: শরীর অনাবৃত হলেই শীত লাগে বা বাতাসের ঝাপটায় শীত লাগে। যেন শরীরে ঠাণ্ডা পানির ছিটা দিচ্ছে।
সার্বদৈহিক: সারা শরীরেই তীব্র ব্যথা। শরীর আড়ষ্ট হয়ে যায় সেজন্য রোগী শরীর মোচরায়, আড়মোড়া ভাঙে (stretch)। সার্বক্ষনিক সঞ্চালনে গাব্যথা কমে। রোগী শীতকাতর। গরম স্নানে, গরম প্রয়োগে এবং গরম পানীয় পানে কমে। পিপাসা – অল্প অল্প গরম পানি পান করে, কদাচিৎ ঠাণ্ডা পানিও পান করতে পারে।
স্থানীয় লক্ষণঃ জিহ্বার অগ্রভাব ত্রিকোনাকার লাল। জ্বরের সাথে ঠোটে হার্পিসের ফোস্কা উঠে (জ্বরঠোসা)। গলাব্যথা। উপশম: গরম পানীয়ে, অবিরাম ঢোক গেলায়।
মাংসপেশীর চাবানি ব্যথা, জয়েন্টের ব্যথা, ঠাণ্ডায় বাড়ে গরমে কমে।
মানসিক: উদ্বিগ্নতা ও অস্থিরতা; ইনফ্লুয়েঞ্জাতে দেখা যায়।
[১০] Oscillococcinum:
ফ্লুর শুরুতে বেশি ব্যবহৃত হয়। অনেক সময় প্রতিরোধক ওষুধ নিষেবে ব্যবহৃত হয়। ডা: মরিসন যেকোন ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রতিরোধক ওষুধ হিসেবে Oscillococcinum এবং Influenzinum ওষুধ সাজেস্ট করেন।
উদ্বিগ্নতা, ফ্যাকাশে চেহেরা; কাপতে থাকে, মাথার মধ্যে বদ্ধমূল ধারণা; একগুয়েমি; বারবার হাত ধোয়। ঝড় খুব ভয় পায়।
চোখ ও নাক থেকে স্রাব যায়; নাক বন্ধ, হাঁচি; সিরামের মতে বা পুঁজের মতো শ্লেষ্মাস্রাব হয়।
ফ্রন্টাল সাইনাসে ব্যথা।
শুষ্ক খুসখুসে কাশি; উভয় কানে বিদ্ধকর ব্যথা, সাথে কানে কম শোনে।
[১১] Eucalyptus globulus
ইনফ্লুয়েঞ্জার সাথে দুর্বলকর ঘাম।
পানির মতো সর্দিস্রাব এবং নাক বন্ধ থাকে; পরবর্তীতে পুঁজের মতো স্রাব।
মুখগহ্বর ও গলার ভিতর সাদা ঘা দেখা দেয়।
পেটের উপরিভাগে (epigastrium) ভারী লাগে বা হৃৎস্পন্দন হয়।
ইনফ্লুয়েঞ্জার পর শ্বাসযন্ত্রের রোগ দেখা দেয়।
প্রচণ্ড গলায় খুসখুস করে কাশি হয়।
[১২] Mercurius solubilis
ডা: বোরলেন্ডের ইনফ্লুয়েঞ্জার পছন্দের ওষুধ।
বিশেষ করে যে ইনফ্লুয়েঞ্জা পরিবর্তিত হয়ে পুঁজযুক্ত সাইনুসাইটিস বা ব্রঙ্কাইটিস হয়।
গলবিলের প্রদাহ, সাথে দুর্গন্ধযুক্ত শ্বাস-প্রশ্বাস, প্রচুর লালাস্রাব, ময়লাযুক্ত জিহ্বা।
প্রচুর ঘাম, ঘামে গন্ধ, ঘামলে বৃদ্ধি; অথবা ঘামলে কোন উপশম হয় না।
ঠাণ্ডা বুকে বসে যায়।
[১৩] Ferrum phosphoricum
ইনফ্লুয়েঞ্জার জ্বর কয়েকদিন ধরে চলতে থাকে।
উচ্চ জ্বর, অবসন্নতা কিন্তু স্থানীয়ভাবে অল্প লক্ষণ প্রকাশ পায়।
ডান পাশ আক্রান্ত হয় – মাথাব্যথা, বুকের ব্যথা, গলবিলের প্রদাহ ডানপাশে দেখা দেয়।
[১৪] Causticum
কাশি, শ্বাস প্রশ্বাসের লক্ষণ থাকে।
সারাশরীরে কামড়ানি, থেতলানো ব্যথা (sore and bruised pain)
ঠাণ্ডা পানির পিপাসা, তাতে জ্বর কমে।
স্থানীয় লক্ষণ: ভোঁতা, চেপে ধরার ন্যায় মাথাব্যথা। ইনফ্লুয়েঞ্জার সময় চোখ থেকে পানি পড়ে।
সর্দিস্রাব ক্ষতকারি, গলা ভেঙে যায়।
কাশিতে কফ বের হয় না; বার বার জোরে কাশতে থাকে কফ বের করার চেষ্টা করে, কফ বের হলে উপশম পায়।
কশির সময় প্রস্রাব হয়ে যায়।
ঘাড় আড়ষ্ট হয়ে পড়ে – জ্বরের সময়।
[১৫] Chelidonium majus
ইনফ্লুয়েঞ্জার সাথে ফুসফুস ও পরিপাক নালীর লক্ষণ থাকে।
সার্বিক: পিপাসা; বিশেষ করে গরম পানি পান করতে চায়।
মাংসপেশির ব্যথা, সঞ্চালনে বাড়ে।
স্থানীয় লক্ষণ: মাথার পিছনে তীব্র ব্যথা অথবা ডান চোখের উপরে ব্যথা।
মুখমণ্ডলে শুষ্ক উত্তাপ।
ইনফ্লুয়েঞ্জার সময় নাক, মুখ এবং গলায় শুষ্ক থাকে।
জিহ্বা শুষ্ক, বাদামী এবং ফাটাফাটা।
উদগার ও বদহজম
শ্বাসকষ্ট, বুকে চাপবোধ, বিশেষ করে ডান বুকে।
[১৬] China officinalis
ইনফ্লুয়েঞ্জা সাথে জ্বরে সময়ে অতিসংবেদনশীলতা।
বিশেষকরে ত্বক অতিমাত্রায় স্পর্শকাতর থাকে।
সুস্পষ্ট মাথাব্যথা, জোরে প্রেসার দিলে মাথাব্যথার উপশম হয়।
শীত করার সময় মুখমণ্ডল মরা মানুষের মতো ফ্যাকাশে হয় (অথবা লালে রঞ্জিত হয়)।
ফ্লুর সময় পেট ফাপা ও উদরাময় দেখা দেয়।
প্রথমে শীত করে, তখন পিপাসা লাগে এরপর জ্বর আরম্ভ হয়, তারপর আবার পিপাসা লাগে।
[১৭] Apis mellifica
উচ্চ জ্বর (over 102° F) সাথে মুখে খুব উত্তাপ, লাল, মুখ খোলা রাখতে চায়।
শুষ্ক, বিরতিহীন উত্তাপ, মুখমণ্ডলে রক্তসঞ্চয় হয়, ফুলে যায়; মোটেই ঘাম থাকে না, রোগী বেশ ঘাম হওয়ার জন্য ব্যকুল হয়ে পড়ে।
ঘামের সাথে শুষ্ক তাপ পর্যায়ক্রমে আসে।
পিপাসাহীন
গলবিলের তীব্র প্রদাহ, আলাজিহ্বা ফুলে যায়, ঠাণ্ডা পানীয়তে উপশম।
সকল লক্ষণ ঠাণ্ডায় ও ঠাণ্ডা প্রয়োগে কমে।
[১৮] Arnica montana
সারাশরীর ফ্লুর সাথে ব্যথা করে।
কোন আরামদায়ক অবস্থা খুঁজে পায় না; বিছানা শক্ত লাগে।
মাথা খুব গরম কিন্তু শরীর ঠাণ্ডা।
দুর্গন্ধযুক্ত শ্বাস-প্রশ্বাস এবং উদগারে পঁচা ডিমের মতো গন্ধ।
[১৯] Asclepias tuberosa
ইনফ্লুয়েঞ্জাতে রোগী খুবই দুর্বল হয়ে পড়ে, হাটতে পারে না।
ফ্লুর সময় বা ফ্লু দীর্ঘায়িত হলে প্লুরায় ব্যথা হয় যা তীরের বেগে অন্যস্থানে ধাবিত হয়।
বৃদ্ধি: শুয়ে পড়লে, বিশেষ করে বামপাশে। হাতের নড়াচড়ায়।, গভীরভাবে শ্বাস নিলে।
উপশম: সামনের দিকে ঝুকলে, হাটার সময় ছোট করে শ্বাস-প্রশ্বাস কাটলে।
[২০] Sulphur
বেশ কিছুদিন ধরে ইনফ্লুয়েঞ্জায় ভোগছে, রোগী এখন পরবর্তী ইনফেকশনে ধাবিত হচ্ছে, ব্রঙ্কাইটিস দেখা দিয়েছে।
শীতকাতর কিন্তু প্রায়ই গরমে বাড়ে; সামান্য গরমে ঘাম হয়।
চটচটে উস্কুখুস্কু তৈলাক্ত চুল।
রোগ আংশিক ভাল হয়ে আবার দেখা দেয়। উপযুক্ত ওষুধে কাজ না হলে।
শরীরে তাপের উচ্ছাস, বারবার হয়।
খোলাবাতাশ সহ্য হয় না; বাতাসের ঝাঁপটা সহ্য করতে পারে না; ধোয়া ও গোসলে বৃদ্ধি।
বুকের মধ্যে চাপবোধ, জ্বালা, খোচা মারা ব্যথা
মাথার তালু গরম , পা ঠাণ্ডা [ML Tyler]
রাতে পা জ্বলে; কাথার বাইরে রাখে।
সকাল ১১ টায় ক্ষুধা লাগে।
দিনের বেলায় ঘুম ঘুম ভাব কিন্তু রাতে অস্থির, ভয়ার্ত স্বপ্ন দেখে চমকে উঠে।
[২১]Tuberculinum bovinum kent
ফ্লুর সাথে কাশি ও প্রচণ্ড জয়েন্টের ব্যথা।
বিকালে জ্বরের তীব্রতা বাড়ে, আরো অসুস্থ হয়; রাতে ঘাম হয়।
জ্বরের সময় জয়েন্টে সুস্পষ্ট ব্যথা বিশেষ করে পায়ের জয়েন্টে ব্যথা হয়।
মৃদু, অবিরাম কাশি হয়, বুকে চেপে ধরে।
যেখানে সালফারও ব্যর্থ হয়, বংশে টিউবারকুলার দোষ থাকে, সেখানে এটি সফলতা নিয়ে আসে [ডা: ইসমাইল]
(পরবর্তী পোস্ট হবে নিউমিনোনিয়ার ওষুধ নিয়ে, ইন শা আল্লাহ)
-----------------------
#তথ্যসূত্রঃ
রজার মরিসনের Desktop Companion to Physical Pathology
থমাস ক্রুজেল, The Homeopathic Emergency Guide
এম এল টাইলার, Pointers to the Common Remedies

No comments: